ভারতের সংবিধানে ১৯৭৬ সালে ৪২ তম সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্মনিপরেক্ষতা যুক্ত হয়। ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ বলতে রাষ্ট্র আর ধর্মকে আলাদা করার যে তরিকা আমরা পাশ্চাত্যে দেখি এই ধর্মনিরপেক্ষতাতে তা নেই। এই ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ, ধর্মহীন বা ধর্মে উদাসীন নয় বরং সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকারমালার মধ্যে ব্যক্তিমানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ১৫ ধারা অনুযায়ী ধর্মের কারণে রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক আচরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। খুব ভালো কথা; এটা অবশ্যই যেকোন সভ্য রাষ্ট্রের নীতি। ২৫ (১) ধারায় বলা হয়েছে যে প্রত্যেক নাগরিকেরই নিজের ধর্ম ঘোষণা, আচরণ এবং প্রচার করবার সমান অধিকার আছে । ২৬ ধারায় আরও বলা হয়েছে যে প্রতিটি নামধারী ধর্মগোষ্ঠীরই অধিকার আছে স্বতন্ত্রভাবে নিজ নিজ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও পরিচালনা করবার, এবং নিজেদের ধর্মীয় শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও পরিচালনা করবার, নিজেদের সমস্ত ধর্মীয় বিষয় নিয়ন্ত্রণ করবার এবং এ উদ্দেশ্যে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রয়, অধিগ্রহণ এবং পরিচালনা করবার । এইধারায় মানুষের ধর্মবিশ্বাস এবং ধর্মাচরণকে মুলত উৎসাহিত করাই হয়েছে।
মজার বিষয় হচ্ছে সংবিধানের ১৪ ধারায় আইনের চোখে সব নাগরিকের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে, আর ১৫ ধারায় ধর্মের কারণে কোনও নাগরিকের প্রতি বৈষম্যনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে । অথচ আরো একটু খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে ১৪ এবং ১৫ ধারায় ঘোষিত নীতি ভারতের একই সংবিধানে ও রাষ্ট্রীয় প্র্যাকটিসে নিদারুনভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। যেমন, আইন ব্যবস্থা হিন্দুধর্মাবলম্বীদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সংবিধানের ১৫ (৪) এবং ১৬ (৪) ধারায় পিছিয়ে পড়া শ্রেণীদের জন্য শিক্ষা ও চাকুরীতে যে সংরক্ষণের অধিকার আছে, সরকারি নীতিতে এবং আইনে তা শুধু হিন্দু হিন্দুধর্মাবলম্বীদের জন্যই প্রয়োগ করা হয়, পিছিয়ে পড়া মুসলিম বা খ্রিস্টানদের জন্য তা প্রয়োগ করা হয়না। হিন্দুধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা রয়েছে, অথচ মুসলিমদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে সেরকম অনুদানের কোনও বিধি নেই। আবার অবিভক্ত হিন্দু পরিবারের জন্য আয়কর আইনে কয়েকটি বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা অন্য ধর্মের মানুষের ক্ষেত্রে নেই।
আমাদের স্যেকুলারপন্থীদের কাছে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার মডেলই আদর্শ। ভারতের মডেলের ধর্মাচারনকে মুলত উৎসাহিত করা এবং ভিতরে ভিতরে হিন্দুত্বের প্রতি পক্ষপাতের বিষয়ে তাঁরা কী বলেন, জানতে ইচ্ছা করে।