ব্রাত্য রাইসু অপরাধ নিবেন না

ব্রাত্য রাইসু আমারে ট্যাগ করিয়া স্ট্যাটাস দিয়াছেন। ব্রাত্য রাইসু তর্কের খাতিরে এমন সব যুক্তির অবতারণা করেন যে যুক্তির প্রাবল্যে তাঁহার সকল কথাই মানিয়া লইতে ইচ্ছা জাগে। নিচের স্ট্যাটাস টিও মানিয়া লইতাম যদি অসঙ্গতি না থাকিত। আসুন উনার স্ট্যাটাস খানা দেখি।

“~ হোয়াই বিজ্ঞান-ধর্ম থিকা অন্য ধর্মগুলা বেটার ~

বিজ্ঞানের বই নামক ধর্মগ্রন্থগুলারেই কেবল ধর্ম বলতেছি না।

বিজ্ঞানের অবয়ব আরো বৃহৎ। সভ্য বিজ্ঞানমনষ্ক বান্দারাও এর অঙ্গ। যখন একজন খ্রিস্টান মতাবলম্বীরে এছলাম মতাবলম্বী ধর্মের পথে আনতে যায় তখন যা ঘটে একই কাণ্ড ঘটে বিজ্ঞান ধর্ম অনুসারী বান্দা যখন ভিন্ন ধর্মানুসারীরে বিজ্ঞান মানতে বাধ্য করে।

বিজ্ঞান সমাজে, সভ্যতায় ধর্ম হিসাবে যেভাবে অন্য ধর্মগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়া সত্য, প্রকরণ, বাস্তবতা ও পরকালের ধারণা তৈয়ার করতেছে সবটাই ধর্ম।

কেবল ধর্মগ্রন্থ ভিত্তি কইরা ধর্ম প্রভাব বিস্তার করে না। বরং যারা প্রভাব করতে চায় ধর্মগ্রন্থরে তারা ব্যবহার করে, সেইটা সায়েন্সের অবতার আর অনুসারীরাও করে।

সত্যের মডেল নির্মাণই ধর্মের কাজ, সেইটা ধর্ম হিসাবে সায়েন্স করতেছেই তো। যত সুনিশ্চিত ভাবে তা করতেছে ততই তা ধর্ম হিসাবে গভীর ও প্রভাববিস্তারি হইয়া উঠতেছে।

বরং বিজ্ঞান ভিন্ন অন্য দুর্বল ধর্মগুলা এই অর্থে বেটার যে সত্য বা নিশ্চয়তার ভিত্তি তাদের আর অত মজবুত নাই। ফলে মানুষের কৃত্য বিবেচনার ক্ষেত্রে সেগুলার অভিমুখ, লক্ষ্য ও কার্যক্রম বিজ্ঞান ধর্ম থিকা ফার মোর বেটার। বাস্তবতারে পাত্তা না দিয়া দুনিয়ায় বসবাস করা – মানুষ হিসাবে এই সিদ্ধান্তের মূল্য অপরিসীম।“

আসুন এইবার দেখি ব্রাত্য রাইসুর স্ট্যাটাস এর অসঙ্গতি সমুহঃ

বিজ্ঞান কাহাকেও মানিতে বাধ্য করা হয়না। বিজ্ঞান কাহারো উপরে চাপাইয়া দেওয়া হয়না। বিজ্ঞান না মানিয়াও বিজ্ঞানের সকল সুফল ভোগ করা যায়, কেউ উহাতে বাধা দিবে না, বিজ্ঞান মনস্ক জনগোষ্ঠী হইতে তাহাকে ত্যাজ্য করিবেনা, তরবারি লইয়া মস্তক ফেলিয়া দিবে না। কিন্তু ধর্ম মানিতে বাধ্য করা হয়। ধর্মের বশ্যতা স্বীকার না করিলে ব্লাসফেমি আছে, ফতোয়া আছে, ধর্মের বশ্যতা স্বীকার না করিয়া মরিয়াও মুক্তি নাই। সৎকার হইবে না। নিজেদের সমস্যা হইলেও জীবিত ব্যক্তিরা মৃতের দেহের উপর প্রতিশোধ লইবে।

বিজ্ঞান কোন সত্য তৈরি করেনা, ইহা বিজ্ঞানের কাজ নহে। বিজ্ঞান যে প্রকরণের জন্ম দেয় তাহা ওয়ার্কিং প্রকরণ, সময়ের সাথে সাথে বদলায়। উহা স্থির নহে। বিজ্ঞান বাস্তবতাও তৈরি করেনা, ইহা বিজ্ঞানের সিমানার বাইরে। বিজ্ঞান শুধুই নাল হাইপোথিসিস কে বাতিল করে। বাস্তবতা তৈরি করে প্রকৃতি। বিজ্ঞান তাঁহার শক্তিকে কাজে লাগাইবার পথ খুজিয়া নেয়। বিজ্ঞান কখনো পরকালের ধারণা তৈরি করে নাই।

বিজ্ঞান কখনো সত্যের মডেল তৈরি করে নাই, বুঝিবার জন্য একটি আকার রচনা করিয়াছে। উহাকে সতসিদ্ধ ধরিয়া কাজ করে নাই। সত্যের অন্বেষণ বিজ্ঞানের চৌহদ্দিতে অসম্ভব। সকল বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে অপ্রমাণ করা সম্ভব এমনকি বিজ্ঞানের সকল তত্ত্বের ভিতরে অপ্রমাণের চাবি থাকে প্রোবাবিলিটি হইয়া।

বিজ্ঞান যখন প্রভাব বিস্তারের উপাদন হইতে চায় তখন তা আর বিজ্ঞান থাকেনা। উহা রাজনীতি হইয়া যায়। বিজ্ঞানের ভিতরে অনিশ্চয়তার উপাদান থাকায় বিজ্ঞান কখনোই ধর্ম হইয়া উঠিতে পারিবে না। কারণ অনিশ্চয়তা ধর্মের পরিপন্থী।

ব্রাত্য রাইসু, ভালো লেখেন, তর্কও করেন চমৎকার। তর্কে উনার দক্ষতা দেখিয়া আমি উনার সহিত তর্কে লিপ্ত হইতে ভয় পাই। কিন্তু তাঁহার সেই স্ট্যাটাস খানি দেখিয়া ভয় ভাঙ্গিয়া ঝাপাইয়া পড়িলাম। আশা করি ব্রাত্য রাইসু অপরাধ নিবেন না।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter