বিজ্ঞানের দর্শন ৩

বিজ্ঞান কী সেটা সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে অনেকেই বেশ মুশকিলে পড়েছেন। কেউ কেউ বলেন বিজ্ঞানীরা যা করেন সেটাই বিজ্ঞান। আবার সাইন্স স্টাডিজের ক্রিটিকেরা বলেন, “ বিজ্ঞান হচ্ছে সংঘবদ্ধ, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ। যার প্রয়োজন, প্রুচুর অর্থায়ন, বৃহৎ ও দামী দামী সব সফিস্টিকেটেড যন্ত্রপাতি এবং শত শত বিজ্ঞানীর যারা ছোট্ট একটা সমস্যার সমাধান খুজতে ব্যস্ত থাকে।”

আদতে বিজ্ঞানের যেকোন প্রকল্পের প্রস্তাবই যদি মুনাফা উৎপাদন করতে না পারে তবে সেটা অর্থায়িত হয়না। যখন জ্ঞান এবং ক্ষমতা একবিন্দুতে মেশে তখন জ্ঞান নিজেই দুষিত হয়ে যায়, এবং কর্পোরেটের ইচ্ছায় সামাজিক নিয়ন্ত্রনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।

সাব অল্টার্ন স্টাডিজের আশিস নন্দি বলেছেন, “বিজ্ঞান হচ্ছে হিংসার ধর্মতত্ত্ব। বিজ্ঞান জ্ঞানের বিষয়ের ও লক্ষ্যের বিরুদ্ধে, জ্ঞানের স্বত্যার্থী ও খোদ জ্ঞানের বিরুদ্ধেই সন্ত্রাস চালায়। কলোরেডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডিয়ান স্টাডিজের একজন অধ্যাপক বলেছেন, “বিজ্ঞান হচ্ছে আমেরিকার নতুন সুরক্ষিত ধর্ম”।

এনলাইটেনমেন্টের সাথে সাথে বিজ্ঞান নিজেকে প্রশ্নাতীতভাবে সত্যের একমাত্র পথ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এই ধারণা প্রথম ধাক্কা খায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জর্মন বিজ্ঞানী ফ্রিটয হাবের এর বিষাক্ত গ্যাস আবিস্কারে। এইবার এই গ্যাস কোন অসভ্য নেটিভদের মারার জন্য ব্যবহার করা হয়নি, হয়েছিল খোদ ইউরোপেই আরেক ইউরোপিয় রাষ্ট্রের উপর। এরপরে এলেন আমেরিকার র‍্যাচেল কারসেন। ডিডিটিকে কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে খোদ আমেরিকাই পরলো পরিবেশগত বিপর্যয়ে, মারা গেল কোটি কোটি পাখি আর উপকারি পতঙ্গ। আমেরিকায় বসন্তে পাখি ডাকতোনা। র‍্যাচেল লিখলেন তার অবিস্মরণীয় বই সাইলেন্ট স্প্রিং, নীরব বসন্ত। এবার সবাই প্রশ্ন করতে শুরু করলেন বিজ্ঞান কি ভুল করতে পারে? এই বিজ্ঞান কি প্রজাতি হিসেবে মানুষকেও ধ্বংস করে দিতে পারে?

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter