বাঙালি যেদিন বুঝতে পারবে সে কেন বিভক্ত, সেটাই ইতিহাসের সেই মহালগ্ন।

বাঙলার ইতিহাস লক্ষ করলে দেখবেন বাংলার জলবায়ুতে একটা বিদ্রোহের ইঙ্গিত আছে। বাংলা কখনো দিল্লীর বশ্যতা স্বীকার করেনি। সুযোগ পেলেই স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে; যেই দিল্লীর শাসন ক্ষমতায় থাকুক না কেন। এমনকি মাইটি মোগল রাও নাস্তানাবুদ হয়েছে বাঙলার কাছে। বাংলার আকাশে বাতাসে বিদ্রোহের সুর ভেসে বেড়ায়। দিল্লীর কাছে বাঙলা চিরকাল একটা সমস্যা। দিল্লি থেকে বাংলার ভৌগলিক দূরত্ব, অসংখ্য নদনদী, বাংলার ঘন বর্ষা, বাংলার হস্তি সৈন্য, বাংলার মশা, ম্যালেরিয়া দিল্লীর সুলতানদের ক্রমাগত বিব্রত করেছে। বিদ্রোহ ছিল বাঙলার মনে রক্তে মজ্জায়। বাংলা সবসময় দিল্লীর জন্য একটা মূর্তিমান অস্বস্তি।

এমনকি দিল্লীর সুলতান হতে পারতো এমন রাজপুত্ররা বঙ্গে এসে দিল্লীর মসনদের লোভ ত্যাগ করেছে। এমন ঘটনা ঘটে প্রথম বঙ্গের সুলতান বুঘরা খানের ক্ষেত্রে। বুঘরা খানকে বঙ্গের সুলতান হিসেবে নিয়োগ করেন তার পিতা দিল্লীর সুলতান বলবন খান। বুঘরা খানের নাম অনুসারে বগুড়ার নামকরণ হয়েছে। বুঘরা খানকে তার পিতার মৃত্যুর পরে দিল্লীর মসনদে বসাতে চাইলে তিনি সেটার লোভ ত্যাগ করে নিজেকে বঙ্গের সুলতান ঘোষণা করেন এবং বঙ্গের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। বুঘরা খান দিল্লীর সুলতান হতে পারতেন কিন্তু এই বঙ্গের ভালবাসায় তিনি বাঙলায় মায়া কাটাতে পারলেন না। বুঘরা খানের পুত্র কায়কোবাদ দিল্লীর সুলতান হয়।

বাঙলা আজো অনেকের অস্বস্তি। কোনদিন আবারো যেন বাঙালি জেগে না ওঠে। পাকিস্তানের চাইতে বাঙলা ভারতের কাছে বেশী অসস্তির। কারণ বাঙলা তাঁদের জন্য ইডিওলজিক্যাল থ্র্যাট। বাংলাদেশ সম্পদে, মর্যাদায়, উন্নয়নে, গনতান্ত্রিক চেতনায়, বিজ্ঞানে, শিল্পে, খেলায় যদি তাক লাগিয়ে দিতে পারে তবে সেটা বহু ভাষাভাষী, বহু জাতির এই ফেডারেশনের জন্য অশনি সংকেত। বাঙালি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম নৃভাষিক জাতি এবং নিঃসন্দেহে ভারতীয় উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ জাতি। ইতিহাসের কোন মহা লগ্নে যদি বাঙালী তার স্টেইক ও স্টেইটাস দাবী করে বসে তাহলে কার বিপদ? আপনারাই ভেবে দেখুন। এই বিপদ যেন না ঘটে তাই এতো অসংখ্য বিভক্তিকে উস্কে দিয়ে জিয়িয়ে রেখে বাংলাকে দুর্বল করা হয়েছে এবং হচ্ছে।

বাঙালি যেদিন বুঝতে পারবে সে কেন বিভক্ত, সেটাই ইতিহাসের সেই মহালগ্ন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter