বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতের টিকিট কেনাবেচা করে না।

বিডিনিউজে রাজু আলাউদ্দিন গোলাম মুরশিদ সাহেবের একটা সাক্ষাৎকার নিয়ে ছাপিয়েছেন। গোলাম মুরশিদকে যারা চিনতে পারছেন না তাঁদের বলি, তিনি হচ্ছেন সেই “হাজার বছরের বাঙালি” তত্ত্বের উদ্ভাবক। প্রথম আলো যাকে সাজায়ে গুছায়ে এমন চাঙ্গে তুলছে। তাই ইনি বাঙালি জাতিবাদী বুদ্ধিজীবীদের প্রথম সারির বরকন্দাজ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, এখন দেশের বাইরেই থাকেন। কলকাতার আনন্দ পাবলিশার্স থেকে তার মাঝে মাঝে বই বের হয়।

যাই হোক, সেই সাক্ষাৎকারের শিরোনাম হচ্ছে, “আপনি শত কোটি টাকা চুরি করে শুধুমাত্র যদি একটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করে দেন, তাহলে পরকালে নিশ্চিত বেহেশত!”

তিনি এই কথা বলে যেটা বুঝাতে চাইছেন সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশে একটা মূল্যবোধের পরিবর্তন হয়েছে। আর পরিবর্তনটা হচ্ছে যে, বেহেশতের টিকিট কেনাবেচা চলছে। উনারে কে এই তথ্য দিছে সেইটা জানার খুব ইচ্ছা আছে আমার।

আদতে এই বেহেসতি টিকিট কেনাবেচার ব্যবসা করেছিল ইউরোপের খ্রিস্ট্রতন্ত্র। চার্চের পাদ্রীরা তাদের বিল্ডিংসহ নানা কিছু আর্টিফ্যাক্ট “বেহেশতের টিকিট” বলে বিক্রি করে চার্চের জন্য টাকা তুলতো। এই ফাইজলামির বিরুদ্ধেই প্রোটেস্ট্যান্টেরা বিদ্রোহ করে। মার্টিন লুথার (১৪৮৩-১৫৪৬) এই বিদ্রোহের নায়ক। তাই তিনি সবচেয়ে রেডিক্যাল (পুতুপুতু না) প্রটেস্টানিজম ধারার নেতা।

তবে বেহেশত কেনাবেচার এই ব্যবসা আমরা কখনো করি নাই। এইটা আমাদের প্রাচ্যের ধর্ম-কালচারের প্রধান ধারায় নাই বা ইতিহাসেও নাই। তবে খুচরা ব্যতিক্রমি চিপায়-চামে থাকতে পারে, যা ধর্ম বিশেষ করে ইসলাম এনডোর্স করে না (আমার জানা মতে)।
যারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করে দেন বা চাঁদা দেন, তাঁরা কোন উদ্দেশ্য নিয়ে করেন- সেটা যারা দেন তাঁরা নিজেরাই বলতে পারবেন। তবে অবশ্যই কেউ তাঁকে বেহেশতের টিকিট বেচছে- সে বিশ্বাস থেকে তিনি অর্থ দেন না। কারণ কম-বেশি আমরা জানি, এভাবে কারো স্পিরিচুয়াল স্যালভেশনের বা মুক্তির নিশ্চয়তা দেয়া যায় না।

ধারণাটা হল, কার বেহেশত হবে আর কার বেহেশত হবে না; এইটা নির্ধারণ করার দায়িত্ব কর্তৃত্ব একমাত্র সৃষ্টিকর্তা বা আল্লাহর। কোন মাওলানা, পুরোহিত বা পাদ্রী এর নির্ধারক নন, কেউ নন। এটা আল্লাহ আর বান্দার সম্পর্ক। বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টির আশা নিয়ে উত্তম কাজ ও ইবাদত করে যাবেন। তার আমলনামা একমাত্র আল্লাহ’ই মূল্যায়ন করবেন। আমি শুনেছি ইসলাম ধর্মে একমাত্র রাসূল ছাড়া এখানে ভিন্ন কোন সুপারিশকারিরও কোন জায়গা নাই। আলেম-উলামারা এই বিষয়ে আরো ভালো বলতে পারবেন।

কিন্তু মুলকথা হচ্ছে, ধর্ম-কে হেয় দেখাতে প্রায়ই আমরা দেখি ধর্ম বা ইসলাম-বিদ্বেষীরা এসব মিথ্যা প্রচারণা ও অপবাদ ছড়ায়। দেখা যাচ্ছে, গোলাম মুরশিদ সাহেবও তাদের একজন হয়েছেন। তবে এই মিথ্যা প্রচারণা তাঁর মত দাবিকারী গুরুত্বপুর্ণ মানুষের জন্য খুবই গর্হিত কাজ হয়েছে। ধর্ম কেউ না মানতে পারেন, তিনি নাস্তিক হতে পারেন, এতে আমার কোন অসুবিধা নাই, কিন্তু সে জন্য তাকে ধর্মবিদ্বেষী বা ঘৃণাবাজ হতে হবে; ব্যাপারটা এমন নয়। আপনার চায়ের কাপ এটা না, তো আপনি খাইয়েন না। কিন্তু মিথ্যা মিথ্যা চায়ের কেন বদনাম করেন, জিনিষটা খুবই খারাপ। এমনটা আপনি বলতে পারেন না। এটা তৃতীয় শ্রেণীর লোকের কাজ। বা চরম পেটের দায়ে পড়ে দু’একজন এমন করে থাকেন। তা গোলাম মুরশিদ সাহেব এমন কোন ক্যাটাগরিতে পড়েছেন শুনি নাই!

অনেক নাস্তিক মনে মনে ভাবতেছেন, ধর্মের নামে কী বাটপারি, ফ্রডারি নাই? অবশ্যই আছে সমাজে। ঠিক যেমন ডাক্তার না হয়েই ডাক্তারিতে কেউ এমন করে, ফ্রডারি আছে সেখানে। সব পেশা বা চিন্তায় এমন আছে। কিন্তু সে কারণে ডাক্তারি বিদ্যাটাই খারাপ, তা তো আমরা বলি না। যে ফ্রডারি করে তাকে খারাপ বলি। তাহলে ধর্মের বেলায় ধর্মের বিরুদ্ধে মিথ্যা বা কুৎসা রটাতে এত উশখুশ করে কেন এদের? এছাড়াও আরও কথা হইতেছে, একটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করে দিয়ে কেউ যদি মানসিক শান্তি পায়, কেউ যদি মনে করে একটা ভালো কাজ করলাম (এটা তো খুবই দরকারি জিনিষ)। তাতে গোলাম মুরশিদ সাহেবদের সমস্যা কোথায়?

বাঙালি জাতিবাদী সংস্কৃতির গভীরে লুকিয়ে থাকা ধর্মবিদ্বেষ এভাবেই অসতর্ক মুহূর্তে প্রকটিত হয়ে ওঠে।

Share

One thought on “বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতের টিকিট কেনাবেচা করে না।

  1. স্যার,
    রাজনৈতিক ব্যাক্তিরা মূলত সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা হিসেবে বলেন তারা মসজিদে অর্থ বা মন্দির নির্মাণ করেন।
    আরেকটা হল… “রাজনীতি”করেন।
    .
    তারা সরকারের টাকায় মসজিদ, মন্দিরে দিয়ে বেহেশতের টিকেট কিনেন?!
    আশ্চায্যন্বিত!হই।
    .
    আর সাধারণ মুসলিমরা মসজিদে দান করেন,পরকালের সাওয়াবের জন্য।
    আরেকটি হাদিস আছে,
    “কেউ যদি দুনিয়াতে আল্লাহর ঘর(মাসজিদ) নির্মাণ করে , আল্লাহ তাকে পরকালে(পরের কথাটা ঠিক খেয়াল নেই,তবে মূল কথাটা এরকমই)
    জান্নাতে তার জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়।(সাথে সাথেই নির্মাণ করা হয়?
    ভাবুন,মুসলিম হলেই সে জান্নাতের টিকিট পায়(পাপ-পুণ্যের ওজনে হয় সে কিছুদিন জেল খাটবে কিন্তু)সে জান্নাতের মালিক আগেই।
    .
    তাই জান্নাতের টিকিট মুসলিমরা কিনেওনা কারো কাছ থেকে আর এটা প্রচারও করেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter