বখতিয়ারের নালন্দা ধ্বংসের মিথ।

সোনার বাঙলার রূপালী কথা লেখার সময় বখতিয়ারের নালন্দা ধ্বংসের মিথ কীভাবে উপস্থাপন করবো ভাবছিলাম। অনেক রেফারেন্স বই ঘেটে যেটা পেলাম, তা হচ্ছে বখতিয়ার দুর্গ ভেবে ভুল করে নালন্দা আক্রমণ করেছিল। এই সিদ্ধান্ত কোন মুসলমান ঐতিহাসিকের নয়, বরং মুসলমানদের সম্পর্কে কিঞ্চিৎ রুষ্ট ঢাবির সাবেক ভিসি আর সি মজুমদারের। পরে ধরমাসাভিনের লেখায় জানলাম যে, তিনি কথিত নালন্দা ধ্বংসের অনেক পরে নালন্দাতে পড়তে গিয়েছিলেন। ফলত এটা অনুমান অসঙ্গত নয় যে; বখতিয়ার সম্ভবত নালন্দা বিহার আংশিক ধ্বংস করেছিল এবং বখতিয়ারের আক্রমণের পরেও নালন্দা আংশিক হলেও পুনর্গঠন করা হয়েছিল।

প্রশ্ন থেকে গিয়েছিল, ভুল কেন করলো বখতিয়ারের মতো এমন দক্ষ সেনাপতি। সে কেন দুর্গ আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পার্থক্য বুঝতে পারলো না। এটার উত্তর পেলাম আজকে। আর্যরা আর্যাবর্তের বাইরে মানে উত্তর ভারতের বাইরে সকল ধর্মস্থানে আক্রমণ এবং লুন্ঠন করতো। তাই ধর্মস্থান এবং বিহার দুর্গের মতো করে তৈরি করা হতো, এমনকি সব বিহারের চারপাশে পরিখা থাকার প্রমাণ আছে। কহলনের রাজতরঙ্গিনিতে হিন্দু রাজাদের মন্দির ধ্বংসের ইতিহাস লিখিত আছে। তাই বিহারকে দুর্গ ভেবে ভুল করাটা বহিরাগত বখতিয়ারের জন্য অসঙ্গত নয়।

এইবার গোল্ডেন কোশ্চেন। এই নালন্দা ধ্বংস নিয়ে স্যেকুলারেরা কাইন্দা বুক ভাসায় কিন্তু আমাদের পাহাড়পুর যেটা ছিল সোমপুর বিহার আর ময়নামতি যেটা ছিল শালবন বিহার; সেগুলো কে ধ্বংস করেছিল ভাইজান?????

ময়নামতি ধ্বংস হয় ব্রাহ্মণদের হাতে আর সোমপুর বিহার বা পাহাড়পুর ধ্বংস হয় পরম বিষ্ণুভক্ত হিন্দু রাজা জাতবর্মার হাতে। ব্রাহ্মণ আর জাতবর্মারা কিন্তু ভুল করে বিহার ধ্বংস করেনি, জেনেশুনেই ধ্বংস করেছিল। তাঁরা জানতো এটা দুর্গ নয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কারণ তার তো আর বহিরাগত ছিলোনা।

সেকারণেই স্যেকুলার কবিরা ময়নামতি আর পাহাড়পুর ধ্বংস নিয়ে নীরব।

তথ্যসুত্রঃ ভারতবর্ষ ও ইসলাম, সুরজিৎ দাশগুপ্ত, সাহিত্য প্রকাশ, এপ্রিল ১৯৯১, পৃষ্ঠা ২৯।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter