বৃটিশ পলিটিশিয়ান নরম্যান এঞ্জেল ১৯০৯ সালে গ্রেট ইলিউশন নামে একটা বই লেখেন। সেই বইয়ে তিনি দেখান যে, কোন রাষ্ট্রের জন্য যুদ্ধ করাটা মোটেই আর অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নেই। যুদ্ধে শুধুই ক্ষতি। তাই পৃথিবীতে আর যুদ্ধটুদ্ধ হবেনা। ১৯১৩ সালে ইকোনমিস্ট পত্রিকা একটা এডিটোরিয়াল ছাপলো, সেখানে তারা বললো, “সভ্য দুনিয়াতে যুদ্ধ হওয়া এখন অসম্ভব”।
নরম্যান এঞ্জেলের ভবিষ্যৎবাণীর পাঁচ বছর পর, আর ইকোনমিস্ট পত্রিকার আশাবাদের এক বছরের মধ্যেই ১৯১৪ সালে পৃথিবী প্রথম ভয়াবহ রক্তাক্ত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি হল।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক কলামিস্ট ছিলেন থমাস ফ্রায়েডম্যান নামে এক ভদ্রলোক। তিনি ১৯৯৯ সালে নিউইয়র্ক টাইমসে মজা করেই লিখেছিলেন, এমন কোন দেশই যুদ্ধে জড়াবেনা যাদের নিজের দেশে ম্যাকডোনাল্ডস আছে। তার মানে বিশ্ব পুঁজিবাদের বিনিয়োগ আছে এমন দুটো দেশ যুদ্ধে জড়াতে পারেনা, তাতে পুঁজি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফ্রায়েডম্যানের এই লেখার কিছুদিন পরেই আমেরিকান বোমারু বিমানগুলো সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে বোমা ফেলে। বলাই বাহুল্য ১৯৮৮ সাল থেকেই সার্বিয়াতে ম্যাগডোন্যাল্ডস চুটিয়ে ব্যবসা করছিলো।
এইসবের অনেক আগেই বিখ্যাত দার্শনিক কান্ট বলেছিলেন, বাণিজ্যের মর্ম এমনই যে তা আজ হোক কাল হোক সব জাতিকেই তার বন্ধনে বেধে ফেলে আর সেজন্যই বাণিজ্য আর যুদ্ধ একসাথে চলতে পারেনা।
বামপন্থিরা বলতো ক্যাপিটালিজমের বা পুঁজিবাদের অন্তর্গত শর্তই হচ্ছে ” যুদ্ধ”। কিন্তু পর্যালোচনায় বামপন্থীদের এই দাবী টেকেনা।
এটা সত্য যে প্রাচীন কালে যুদ্ধ বেশ লাভজনকই ছিলো, এর ফলেই সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয়েছে, সোনা এবং প্রভুত রত্ন বিজয়ী সম্রাটের হস্তগত হয়েছে, দাস ব্যবসা হয়েছে, উপনিবেশ হয়েছে। এটাও সত্য যে বিশ্ব বাণিজ্যের উদ্ভবের পরে যুদ্ধ আর আগের জামানার মতো লাভজনক নাই। কিন্তু তাহলে পৃথিবীতে যুদ্ধ কেন থামছে না?
এর কারণ সম্ভবত অন্য জায়গায়। আমরা ধরেই নিয়েছি অর্থনৈতিক স্বার্থই রাষ্ট্রের প্রধান ও একমাত্র স্বার্থ। কিন্তু আদতে অর্থনৈতিক স্বার্থই রাষ্ট্রগুলোর একমাত্র স্বার্থ নয়, এমনকি সবসময় এটা প্রধান স্বার্থও থাকেনা। এবং কখনো কখনো অর্থনৈতিক স্বার্থের চাইতে রাজনৈতিক স্বার্থ রাষ্ট্রগুলোর কাছে অধিক গুরুত্ব পায়। অর্থনীতির চোখ দিয়ে মুল্যায়ন করলে যুদ্ধ লাগাটাই অযৌক্তিক বলে মনে হতে পারে কিন্তু অর্থনৈতিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করেও যুদ্ধ লাগাটা আজকের দুনিয়াতেও মোটেও অসম্ভব নয়।