জাফর ইকবাল দাবী করেছেন, দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের জিয়াউর রহমান ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন, “বাংলাদেশ অ্যাবাউট টার্ন করে পুরোপুরি উল্টোদিকে পাকিস্তানের পথে যাত্রা শুরু করল। নেতৃত্ব দিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। জেলখানা থেকে যুদ্ধপরাধীরা ছাড়া পেয়ে গেল, তারা রাজনীতি করা শুরু করল।”
দণ্ডিত কাউকে ছেড়ে দিতে হলে কোন না কোন একটা পদ্ধতি অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। জাফর ইকবাল বলেননি, কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে জিয়াউর রহমান দণ্ডিত দালালদের ছেড়ে দিয়েছিলেন। সম্ভবত তিনি বলতে চেয়েছেন, জিয়াউর রহমান দালাল আইন বাতিল করেছিলেন তাই দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যায়। দালাল আইন বাতিল আদেশ কি জিয়া বলবৎ করেছিলেন? সেই দালাল আইন বাতিল আদেশ অনুসারে কি দণ্ডিত কারো ছাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল? আসুন বিষয়টা একটু খতিয়ে দেখা যাক।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধাপরাধের দায়ে ৩৭ হাজার ব্যক্তিকে আটক করা হয়। যাঁদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল না, তাঁদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। এই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেই সময়ের সরকারি প্রেস নোটে বলা হয়েছিলো, যাঁদের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ ইত্যাদির নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকবে, তাঁদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে মামলা দায়ের করা হবে। ওই ঘোষণার পরে প্রায় ৩৭ হাজার লোকের মধ্যে প্রায় ২৬ হাজার অভিযুক্ত বন্দি ছাড়া পান। কারাগারে ও পলাতক অবস্থায় থাকেন প্রায় ১১ হাজার। এই ১১ হাজারের মধ্য থেকে ৭৫২ জন আদালতে দণ্ডিত হয়েছিলেন।
দালাল আইন ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাতিল হয়। এটি বাতিল করেন রাষ্ট্রপতি সায়েম। জিয়াউর রহমান নিজে এটা বাতিল করেননি।
১৯৭৫ সালে সায়েমের করা বাতিল আইনটির মাত্র দুটি ধারা ছিল। প্রথমটি ধারায় বলা হচ্ছে, পিও ৮ বাতিল করা হলো। পি ও ৮ মানে হচ্ছে, PRESIDENT’S ORDER NO. 8 OF 1972। দালাল আইন, ১৯৭২ বলতে দ্যা বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার, ১৯৭২ কে সংক্ষেপে “পি ও ৮” বলা হতো।
দ্বিতীয় ধারায় বলা হচ্ছে, ‘এই আইন বাতিলের আগে যাঁদের নামে যেকোনো আদালতে বা কর্তৃপক্ষের সামনে মামলার কার্যক্রমবিষয়ক যা-ই চলতে থাকুক না কেন, তা আর সামনে এগোবে না। যেখানে যে অবস্থায় যা আছে, তা মৃত্যুমুখে পতিত হবে।’ আর যারা দণ্ডিত হয়েছিলো তাদের সম্পর্কে বাতিল আইনের ধারাটি ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানেই দণ্ডিত অপরাধীরা যেন ছাড়া না পেয়ে যায়, তার জন্য রক্ষাকবচ দেয়া ছিলো। সেখানে বলা হয়েছিলো, ‘যারা দালাল আইনে ইতিমধ্যে দণ্ডিত হয়েছে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে আপিল করেছে, তাদের ক্ষেত্রে এই বাতিল অধ্যাদেশ প্রযোজ্য হবে না।’
দালাল আইনে দণ্ডিতদের ক্ষেত্রে বাতিল আইন এমনভাবে প্রযোজ্য হবে, যাতে ধরে নিতে হবে বাতিল আইন কখনো জারিই করা হয়নি।
বাতিলকৃত আইনের সুযোগে কোন দণ্ডিত অপরাধীর জেলখানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
সায়েমের দালাল আইন বাতিলের পেছনে জেনারেল জিয়ার হাত ছিলো বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়। যদি সেটা সত্য বলে ধরে নেই, তাহলে বাতিল আইনের দ্বিতীয় ধারায় দণ্ডিত দালালেরা যেন সাজা থেকে মুক্তি না পায় তার রক্ষাকবচ দেয়ার কৃতিত্ব জিয়াউর রহমানকেই দিতে হবে।
দণ্ডিত অপরাধীরা কীভাবে জেল থেকে বেরিয়ে গেছে, সেটা খোঁজ করেন আগে। উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে দিলে কি চলবে?
One thought on “জাফর ইকবাল : উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে দিলে কি চলবে?”
জিয়াউর রহমান যদি দালাল আইন বাতিলও করেন তাতে কি! বাংলাদেশেএমন কোন আদর্শবাদী দল নাই যাদের গায়ে দালালের চামড়া লেপ্টে নেই। একাত্তরে হাসিনার husband পাকিদের গোলামী করে করেই পাকি সরকারের বেতন তুলেছেন। জাফর ইকবালের বাবা পাকি সরকারের পুলিশ বিভাগে থেকেই বেতন draw করতেন। আসলে এগুলো খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু ধান্ধাবাজ বিপথগামী সুবিধাভোগী নৈরাজ্যবাদী রা সমাজে বিভেদ ও অনৈক্য জিইয়ে রেখে নিজেদের স্বার্থ চিরস্থায়ী করে রাখার জন্যই এসব করে বেরায়। একাত্তর হল ভিন্ন প্রেক্ষাপট,মাতৃভূমি ছিল পাকিস্তান। অতএব বৃহত্তর অংশই ঐ সময়ের প্রেক্ষাপটে ভূল decision নিতেই পারে। তাই বলে তার legacy সারাজীবন বয়ে যেতে হবে কেন! তাহলেতো কম্বল বাছতে গা উজারের অবস্থা হবে।ঐ সময়েতো অধিকাংশই সরকারি চাকরিই করেছিল,তাদের কি হবে।যেকোন ঐতিহাসিক ঘটনারই দুই বা ততোধিক পক্ষ থাকে,বিজয়ীরাই নির্ধারিত করে পরাজিতের শাস্তি কি হবে,একাত্তরে বিজয়ী শক্তি আওয়ামী লীগ ভারতীয় স্বার্থে সিদ্বসন্ত নিতে গিয়ে মূল ১৯৫যুদ্ধাপরাধীকে ছেড়ে দেয়। অতএব এখন যুদ্ধাপরাধ নিয়ে হাউকাউ ,মাতামাতি মুক্তিযুদ্ধ বিক্রি করে খাওয়ার নামান্তর।