আমি সিনেমা টিনেমা খুব একটা দেখিনা। হঠাৎ জাতিস্মর সিনেমাটা দেখলাম। অনেক নাম শুনেছিলাম। হিন্দু ধর্ম মতে মানুষের মোক্ষ বা পুর্ণ মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তার এই পৃথিবীতে পুনর্জন্ম হতেই থাকে। যদি মানুষ আগের জন্মের ঘটনা মনে করতে পারে তবে তাঁকে জাতিস্মর বলে।
ঘটনাটাটা পর্তুগীজ এন্টনি ফিরিঙ্গীকে নিয়ে। যিনি উনিশ শতকে বৃটিশ ভারতে বাংলা কবিগান চর্চা করতেন। এই এন্টনি ফিরিঙ্গিই পরবর্তিতে বাঙালি হয়ে জন্ম নেয়; সিনেমার মুল ঘটনা এটাই। সিনেমার গল্পে যাবোনা আমার আগ্রহ সেখানে নয়। আগ্রহ সিনেমার সূক্ষ্ম রাজনৈতিক বক্তব্যে।
সিনেমায় দেখায় এন্টনি ফিরিঙ্গী সতীদাহ থেকে এক নারীকে বাচাচ্ছে। তারপর তাঁকে বিয়ে করছে। লর্ড বেন্টিংক বাঙালি হিন্দুকে সভ্য বানানোর প্রজেক্টে রাজা রামমোহন রায়ের হাত ধরে শুরু করেছিলেন। এরফলে যেই বাঙালি এনলাইটেনমেন্টের পথে যাত্রা শুরু করেছিল। রবীন্দ্রনাথ যাকে এনলাইটেনমেন্টের স্বর্গদ্বারে পৌছে দিয়েছিলেন; সেই বাঙালি হিন্দুর স্বর্গ প্রাপ্তি হচ্ছিল না, সে মোক্ষ লাভ করছিল না, তাইতো সে বারে বারে এই পৃথিবীতে জন্ম নিচ্ছিল। কারণ তার গায়ে লেগে আছে সতীদাহের আদিপাপ। এই আদিপাপ নিয়ে সে কীভাবে মোক্ষ লাভ করবে?
জাতিস্মর সিনেমার নায়িকা স্বস্তিকা মুখার্জি প্রেমে পড়েছে। উদাস দৃষ্টিতে বিকেলে ছাদে দাড়িয়ে আছে। মা মেয়ের এই উড়ু উড়ু মন দেখে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে।
“-কে? ছেলে না মেয়ে?”
মানে ছেলের প্রেমে পরেছিস নাকি মেয়ের। আগে যেটা আধুনিক মায়েরা বলতেন, “ছেলেটা কেরে?”। অথবা আরেকটু এগিয়ে বলতেন “অ্যাই, ছেলেটা কী তোর হাত ধরেছে?”
জাতিস্মরের নায়িকা স্বস্তিকার মা অতো ম্যাদামারা নয়। তাই সে আরেকটু এগিয়ে আবার বলে, “মেয়েই ভালো, ঝামেলা কম।”
বাঙালি হিন্দু মা আরো এগিয়ে সমকামিতাই ভালো; এইটা বলে সকল আদি প্রথা ও ঐতিহ্যকে ক্রুশবিদ্ধ করে নিস্পাপ এক নতুন বাঙালি হিন্দুকে পুনরুত্থিত করে। এই বাঙালি হিন্দু সতীদাহের আদিপাপ থেকে মুক্ত। বাঙালি হিন্দু এনলাইটেনমেন্টের দুয়ারে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে ভিতরের রাশ উৎসব দেখে দেখে পা ব্যাথা করে ফেললেও নিজেই শেষে জোর করে ঢুকে পরে সেই দুয়ার দিয়ে। বাঙালি হিন্দুর মোক্ষলাভ হয়।
One thought on “‘জাতিস্মর’ সিনেমা বাঙালি হিন্দুদের মোক্ষলাভ।”
মোক্ষলাভ করা দেখি খুব সোজা! ?