কার্ল মার্ক্স মনে করেছিলেন পুজিবাদ তার মুনাফাকে ম্যাক্সিমাইজ করার জন্য শ্রমিককে এতো কম বেতন দেবে যা শুধুমাত্র তার বেচে থাকার জন্য জরুরী। এরফলেই এই অসাম্য একদিন শ্রমজীবীদের বিদ্রোহ করতে বাধ্য করবে। এই বিদ্রোহেই পুজিবাদের বদলে নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।
কার্ল মার্ক্সের অনুমান সঠিক ছিলোনা। ক্যাপিটালিজম তার প্রবৃদ্ধি ঠিক রেখেও তার অস্তিত্বকে ঝুকির মধ্যে না ফেলেও শ্রমিককে অনেক ভালো বেতন দিতে পারে ফলে শ্রমিক শ্রেনীও পুজিবাদের সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেনী হয়ে উঠতে পেরেছে। শ্রমিক শ্রেনীর মধ্যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বদলের প্রনোদনা জেগে ওঠেনি। আমরা আমাদের দেশের শ্রমিক শ্রেনীর কথাও জানি, তারা সমাজের বিপ্লবী শ্রেনী নয়, বরং তারা এই সমাজের দুর্বৃত্তায়িত অংশ।
তাহলে কি এই ক্যাপিটালিজমের কাল শেষ হবেনা? সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইণ্ডিয়ার গভর্নর রঘুরাম রাজন একবার বলেছিলেন, গনতান্ত্রিক পুজিবাদি সমাজ নিছক অর্থনীতির ইতিহাসের একটি কালপর্ব নয়, বরং এটাই চুড়ান্ত গন্তব্য।
কিন্তু আধুনিক পুজিবাদের জনক কেইনস কী বলেছিলেন? তিনিও পুজিবাদের বিনাশ দেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন পুজিবাদ তার অন্তিম সময়ে “প্রাচুর্য” থেকে “অতি প্রাচুর্যের” জন্ম দেবে। এই অতি প্রাচুর্যের জন্ম হবে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে। এই অতি প্রাচুর্যের কালে সম্পদের বিতরনের জন্য যেসব সামাজিক নিয়ম আর অর্থনৈতিক রীতি চালু ছিলো সেগুলো পরিত্যাক্ত হবে এবং এর ফলেই মানুষ মুক্ত হবে। ক্যাপিটালিজম তার নিজের সাফল্যের জন্যই একসময় নিজেই নিজেকে ধংস করে এক নতুন ব্যবস্থার জন্ম দেবে। এযেন সেই পুজিবাদের শুয়োপোকা থেকে প্রজাপতির জন্ম নেয়ার মতো ঘটনা।
অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন সেই অতি প্রাচুর্যের কালে কল্যান রাষ্ট্রগুলো আরেক ধাপ অগ্রসর হয়ে সকল নাগরিককে একটা বেইসিক আয় বা সোশ্যাল ডিভিডেন্ডের ব্যবস্থা করবে। সেই বেইসিক আয়, থাকা খাওয়া সহ সকল মৌলিক চাহিদার যোগান দেবে। কেউ শুধু এটা নিয়েই তার বাকী জীবন কবিতা লিখে, প্রকৃতি দেখে, আধ্যাত্মিক চর্চা করে, নতুন কিছু আবিস্কার করে কাটিয়ে দিতে পারে। আবার চাইলে কেউ কিছু সময় কাজ করে বাড়তি কিছু আয় করতেই পারে। তবে বেচে থাকার জন্য কাজ করাটা বাধ্যতামূলক আর থাকবে না।
এই ব্যবস্থা পকিটিক্যালি কতটুকু ভায়াবল হবে সেটা ইতিহাসই বলে দেবে, তবে মানুষের চাহিদার চাইতে বেশী সম্পদ থাকলেই মানুষ সেইসময়ে তার আসল মুল্য বুঝতে পারবে। সেই মুক্ত মানুষের মুক্ত সমাজ যে ক্যাপিটালিজমের মধ্যে দিয়েই সম্ভব, সেটা কেউ কখনো আমাদের দেখিয়ে দেয়নি, এটাই আফসোস।
সেইসময়ে যখন পৃথিবীর ইতিহাস প্রবেশ করবে, তখন আমরা কেউই এই পৃথিবীতে থাকবোনা, কিন্তু সেদিনের মুক্ত মানুষের মুক্ত সমাজ তৈরির হাজার হাজার বছরের পদযাত্রায় একদিন আমাদেরও ক্ষুদ্র ভুমিকা ছিল সেটা সেদিনের মানুষেরা নিশ্চয়ই স্মরণ করবে।