কালের কণ্ঠের উস্কানিমুলক রিপোর্ট এবং হেফাজত নিয়ে এলার্জি

“পাঠ্য বইয়ে এসব কী”? শিরোনামে আজিজুল পারভেজ কালের কণ্ঠে একটি উস্কানিমুলক রিপোর্ট লিখেছেন। সেখানে সাম্প্রতিক পাঠ্য পুস্তকে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে সেজন্য হেফাজতে ইসলামীকে আউট অব কন্টেক্সট দায়ী করা হয়েছে। এমনভাবে সংবাদ উপস্থাপন করা হয়েছে যেন হেফাজত অগনতান্ত্রিকভাবে শক্তি প্রয়োগ করে সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যে এই পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তনে সরকারকে বাধ্য করেছে।

রিপোর্টে লেখা হয়েছে, “২০১৩ সালে গড়ে ওঠা সংগঠন হেফাজতে ইসলাম পাঠ্যপুস্তক সংস্কারের তীব্র বিরোধিতা করে। ওই বছরের শুরুতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়া ওঠা শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সময়ে ইসলামী ছাত্রশিবির পরিচালিত ফেসবুক পেজ বাঁশের কেল্লায় পাঠ্যপুস্তকের বাংলা বই থেকে কী কী ইসলামী ভাবধারার লেখা বাদ পড়েছে এবং কোন কোন ‘হিন্দু লেখক’ ও ‘হিন্দুত্ববাদী’ লেখা যুক্ত হয়েছে সেই তালিকা প্রকাশ করা হয়। এর পর থেকে পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের দাবিতে হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।“

এইটা উদ্দেশ্যমুলক উপস্থাপন। ২০১৬ সালের ৮ই এপ্রিল হেফাজত একটা বিবৃতি দেয় সিলেবাস নিয়ে। সেখানে তারা সুনির্দিস্টভাবে উল্লেখ করে, “দেশের স্কুল-কলেজ ও ইউনির্ভার্সিটিগুলোতে কোটি কোটি মুসলমানের সন্তান কী পড়ছে, অভিভাবকরা জানেন না।“ তাঁদের এই অভিযোগ যৌক্তিক। কারণ পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন, সংযোজন-বিয়োজনের নিয়ম হচ্ছে, এক ধরনের সামাজিক অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনের রীতি এবং প্র্যাকটিস দেশে বর্তমানে অনুসরন করতে হয়। এবং সেই সামাজিক অংশগ্রহণের আলোকে এনসিসিসিতে (ন্যাশনাল কারিকুলাম কো-অর্ডিনেশন কমিটি) পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করে। এই সামাজিক অংশগ্রহণ শুধু হেফাজত কেন কারো কাছেই দৃশ্যমান হয়নি।

২০১৬ সালে যখন আবিষ্কৃত হল ২০১২ সালের পাঠ্যপুস্তক থেকে ২০১৩ সালেই একধরণের র‍্যাডিক্যাল চেঞ্জ হয়েছে, এবং এই চেঞ্জের বিষয়ে অভিভাবকেরা অবহিত নন, তখন আপত্তি তোলাটা খুবই যৌক্তিক। একজন মানুষ তার ডেমোক্রেটিক এসপিরেশন থেকেই এই প্রশ্ন তুলতে পারে। বিবৃতিতে হেফাজত সিলেবাসের র‍্যাডিক্যাল পরিবর্তনে বিস্ময় প্রকাশ করে এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে। হেফাজতের আপত্তির জায়গাটা দেখুন, কোন চাপ প্রয়োগ নয় বরং একটি পদ্ধতিগত বিষয় নিয়ে খুব যৌক্তিক প্রশ্ন তারা তুলেছে এবং সরকার প্রধানের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। অথচ প্রতিবেদক কীভাবে বাশের কেল্লা থেকে শাহবাগ নিয়ে বিষয়টা গুলিয়ে ফেলে একটি চতুর উপস্থাপন করলেন।

হেফাজত সেই বিবৃতির সাথে ২০১২ সালের থেকে ২০১৩ সালের বইগুলোতে কী কী মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে তার একটা তালিকা সংযুক্ত করে। যেখানে দেখা যায় ১৭ টি রচনা বাদ দেয়া হয়েছে আর ১২ টি নতুন রচনা ঢুকানো হয়েছে। এই ১২টি রচনায় কোথায় কোথায় তাঁদের আপত্তি সেটাও সংক্ষেপে তারা তুলে ধরে। এখন এই অবস্থার একটা সাম্ভব্য সমাধান হতে পারে, মৌলিক পরিবর্তনের আগে যেই অবস্থায় ছিল সিলেবাসকে সেই অবস্থায় মানে ২০১২ সালের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। খেয়াল করুন ২০১২ সালে মানে আওয়ামীলীগের সরকারের চতুর্থ বছর এবং বিএনপি জামাত জোটের প্রস্থানের ষষ্ঠ বছর। তাহলে কীভাবে ২০১২ সালের সিলেবাস পুনর্বহাল হলে সেটা জোট সরকারের আমলে সিলেবাস প্রত্যাবর্তন করা হয়?

২০১২ সালের সিলেবাস হেফাজতের স্বপ্নের সিলেবাস এটা হেফাজত বলে নাই। এই সিলেবাসেও হেফাজতের বলার কিছু থাকতে পারে। সেইটা হেফাজত করতে চায় একটা সামাজিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে- অভিভাবকদের সম্মতিতে, সেটা তাঁদের বিবৃতিতে স্পষ্ট। সিলেবাস পরিমার্জন বা পরিবর্তনের জন্য যে সামাজিক অংশগ্রহণ দরকার এখন সেই সামাজিক অংশগ্রহণের একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। সরকার ২০১২ সালের সিলেবাসে মোটামুটি প্রত্যাবর্তন করার এই পদক্ষেপ নিয়ে বিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে। এবার নতুন আলোচনা চলুক, অসুবিধা কোথায়? এই আলোচনায় স্যেকুলারেরাও অংশ নেবেন। আপনারা আপনাদের কথা বলুন, হেফাজত বলবে, অভিভাবকেরা বলবে, সবাই বলবে। এভাবেই সামাজিক বিতর্কগুলোর মাধ্যমে সমাজের চিন্তাগুলো শেইপ পাবে। সমাজে চিন্তা থিতু হবে। নাকি আপনারাই গায়ের জোরে চাপিয়ে দেবেন আপনাদের পছন্দ?

লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter