একুশে ফেব্রুয়ারি আঞ্চলিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে রেখে দেখা।

১৯৫২ র একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির কোন আকস্মিক বিস্ফোরণ ছিলনা। ব্রিটিশ উপনিবেশের নিগড় ছিঁড়ে বেরিয়া আসার জন্য যেই জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল এই অঞ্চলের মানুষের সেই চেতনাই পুরো ভারত জুড়ে ভাষা ভিত্তিক জাতীয়তাবাদী লড়াইয়ের জন্ম দিয়েছিল। নেহেরুর ভারত একভাবে এই লড়াইগুলোর মোকাবেলা করেছে, জিন্নার পাকিস্তান আরেকভাবে এই লড়াইগুলো মোকাবেলা করেছে। পাকিস্তান রাষ্ট্রটির জাতি দর্শনের গোঁড়ায় মারাত্মক ভ্রান্তি থাকায় পূর্ব বঙ্গের জাতীয়তাবাদী লড়াই স্বাধীন দেশ গঠনের দিকে ধাবিত হয়েছে আর ভারত আরও সংহত হয়েছে।

ভাষা আন্দোলনকে সমসাময়িক আঞ্চলিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে রেখে মূল্যায়ন হয়েছে কিনা আমার জানা নেই অন্তত আমার চোখে পড়েনি।

আমি এই লেখায় ভারতের কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার ক্রমপঞ্জি উল্লেখ করবো। আপনার খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন সেই ঘটনাগুলোর সাথে পূর্ববঙ্গের ভাষা আন্দোলনের সময় পঞ্জি মিলে যাচ্ছে। দেখবেন, নেহেরু যেন জিন্নার ভাষায় কথা বলছেন।

১৫ ই জানুয়ারি ১৯৪৮ এ স্বাধীনতার পরে প্রথম মহাত্মা গান্ধী ভাষা ভিত্তিক রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য কংগ্রেসের ২০ বছরের পুরনো সিদ্ধান্তের কথা মনে করিয়ে দেন। বেকে বসেন নেহেরু, বল্লভ ভাই প্যাটেল। বেকে বসে সদ্য স্বাধীন ভারতের আমলারাও। ভাষা ভিত্তিক রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য আমলা আর বিচারকদের নিয়ে একটা কমিশন গঠন করা হল। সেই কমিশন বলল,

দেশের অনেকের কাছেই ভাষার ভাবগত আবেদন খুব জোরালো, একথা মেনে নিয়েও কমিশনের সিদ্ধান্ত এই যে বর্তমান অস্থির অবস্থায় ভারতের প্রথম আর শেষ প্রয়োজন হল তাঁকে একটি নেশন হিসেবে গড়ে তোলা। যা কিছু অভিন্ন জাতি গঠনে সাহায্য করে তাঁকে মদদ দিতে হবে আর যা কিছু তাঁর পথে বাঁধার সৃষ্টি করে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। পরীক্ষার এই মানদণ্ডে আমরা ভাষা ভিত্তিক প্রদেশ গঠনের উপরে প্রয়োগ করে দেখেছি এই দাবীকে সমর্থন করা যায়না।

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাষা ভিত্তিক রাজ্যের জন্য আন্দোলন গড়ে উঠতে থাকে। মারাঠি ভাষীরা স্বতন্ত্র মহারাষ্ট্রের জন্য, গুজরাটি ভাষার রাজ্যের জন্য গুজরাটিরা, ওড়িয়া, কন্নর, মালয়ালাম ভাষাভাষীরাও একই দাবী তুলতে থাকলেন। এই বিক্ষোভকে শান্ত করার জন্য নেহেরু, প্যাটেল আর পট্টোভি সীতারামাইয়া সদস্য করে একটি কমিটি গঠন করা হয় ১৯৪৮ সালে। সদস্য সবার নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে এই কমিটিকে ডাকা হতো জেভিপি কমিটি। এই কমিটি ১৯৪৯ সালে রিপৌর্ট পেশ করে, তাঁরা যুক্তি দেয়,

ভাষার যেমন বাঁধবার ক্ষমতা আছে তেমনি ভাঙ্গার ক্ষমতাও আছে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে ভারতের নিরাপত্তা, ঐক্য আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির উপরে, কাজেই সব রকম বিভেদকামী বিচ্ছিন্নতাকারী প্রবণতাকে সর্বপ্রযত্নে দমিয়ে রাখতে হবে।

পাশাপাশি ১৯৪৮ থেকে ১৯৪৯ ভাষা ভিত্তিক স্বায়ত্ত শাসনের দাবী জোরালো হয়ে উঠতে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংযুক্ত কর্নাটক আন্দোলন, যার লক্ষ্য ছিল মাদ্রাজ, মহীশুর, বোম্বাই আর হায়দারাবাদে ছড়িয়ে থাকা কন্নড় ভাষীদের এক করা। আর ছিল সংযুক্ত মহারাষ্ট্র আন্দোলন যারা চাইতো সব মারাঠা ভাষীদের একটি স্বতন্ত্র রাজ্যে কেন্দ্রীভূত করা আর মালাবারের সঙ্গে কোচিন আর ত্রিবাংকুর মিলে চাইলো মালয়ি রাজ্য। গুজরাটিরা একই ধরণের দাবীতে চালালো “মহাগুজরাট” আন্দোলন।

ভাষা ভিত্তিক স্বায়ত্ত শাসন নিয়ে সবচেয়ে জোরালো আন্দোলন গড়ে উঠলো অন্ধ্রের তেলেগু ভাষীদের মধ্যে। ১৯৫১ সাল সীতারাম নামে একজন প্রবীণ শ্রদ্ধাভাজন প্রাক্তন কংগ্রেসি অন্ধ্র প্রদেশ নামে নতুন রাজ্য তৈরির জন্য অনশনে বসেন। পাঁচ সপ্তাহ সেই অনশন চলে। এরপরে অন্ধ্র রাজ্য প্রদেশ তৈরির বিষয়টা নিয়ে ভৌট হয়। সেই ভৌটের ক্যাম্পেইন করতে নেহেরু যখন অন্ধ্রে যান তখন নজিরবিহীন বিক্ষোভের মুখে পড়েন। যথারীতি সেই নির্বাচনে কংগ্রেস গো হারা হারে। নির্বাচনের ফলে ভাষা ভিত্তিক অন্ধ্র প্রদেশের দাবী গতি পায়। ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ র শেষ দিকে (সময়টা খেয়াল করুন) সীতারাম তেলেগু ভাষী জনপদ গুলোর মধ্যে দিয়ে পদযাত্রা শুরু করেন। ১৯৫২ সালে পোট্টী শ্রীরামুলু নামে এক ইঞ্জিনিয়ার অন্ধ্র রাজ্যের দাবীতে আমরণ অনসন শুরু করেন। অন্ধ্র ফুসে উঠতে থাকে। শেষ পর্যন্ত অনশনের ৫৮ দিনে মাথায় পোট্টী শ্রীরামুলু মারা যান। বিস্ফোরিত হয় অন্ধ্র প্রদেশ। ব্যাপক সহিংসতা হয় অন্ধ্রে। শেষ পর্যন্ত নেহেরু অন্ধ্রের পৃথক রাজ্যের দাবী মেনে নেন।

অন্ধ্রের এই দাবীকে নেহেরু সহজভাবে মেনে নেননি। এক সহকর্মীকে তিনি দুশ্চিন্তার সুরে বলেছিলেন, আপনি দেখবেন, এই যে ভীমরুলের চাকে আমরা খোঁচা মারলাম, এর ফল কত ভুগতে হয়। আমার ধারণা আমরা অধিকাংশই এর কামড়ে ক্ষত বিক্ষত হবো।

নেহেরুর বক্তব্য সত্য হয়েছিল। সারা ভারতই যেন ভাষাকে কেন্দ্র করে জেগে উঠলো। ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ ইন্ডিয়া আফটার গান্ধীতে লিখেছেন, ভাষাভিত্তিক রাজ্যের সপক্ষে যেসব আন্দোলন হয় তা থেকে জনগনের মনের এক আশ্চর্য গভীরতার ছবি ফুটে ওঠে। কন্নড় আর অন্ধ্রে, ওড়িয়া আর মহারাষ্ট্রবাসী, দেখা গেল সকলের কাছেই পরিচায়ক চিহ্ন হিসেবে জাতিবর্ণ বা ধর্মের তুলনায় ভাষার জোর অনেক বেশি।

মহারাষ্ট্রতেও নতুন ভাষা ভিত্তিক প্রদেশ তৈরির লড়াই শুরু হয়। সেই লড়াই আবার ভিন্ন মাত্রা পায় বম্বাই শহরের কারণে। এক পক্ষ চাইছিল বোম্বাই মহারাষ্ট্রের বাইরে থাকুক। আবার মারাঠা ভাষাভাষীরা চাইছিল বোম্বাই জেন হাতছাড়া না হয়। বিপুল বিক্ষোভ শুরু হয় বোম্বাইয়ে। ১৯৫৫ সালের ১৬ ই জানুয়ারি পুলিশের সাথে সংঘর্ষে বোম্বাই শহরেই কমপক্ষে বারো জনের প্রাণহানি ঘটে।

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে টাইমস অব ইন্ডিয়া লেখে, ভারতের মানচিত্রকে ভাষার ভিত্তিতে নতুন করে আঁকতে গেলেই এতদিন ধরে ওঁৎ পেতে থাকা প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলো সুযোগ পেয়ে যাবে। তারা তখন প্রকাশ্যে নিজেদের শক্তি প্রতিষ্ঠা করবে। তা ভারতের অখণ্ডতার একেবারে মূলে কুঠারাঘাত করবে।

এটা খুবই কৌতূহলউদ্দীপক যে নেহেরু এবং টাইমস এর ভবিষ্যৎবাণী ফলেনি। ২০০৭ সালে ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ লেখেন আজ পিছন ফিরে দেখলে মনে হয়, ভাষা ভিত্তিক পুনর্গঠন বরং ভারতের ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করেছে। কীভাবে ভারতে সেটা সম্ভব হয়েছে কিন্তু পাকিস্তানে হয়নি তা সেই আলোচনা শুরু হলে হয়তো আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাস এবং পর্যালোচনা এক নতুন মাত্রা পেত।

যদিও রামচন্দ্র গুহের মতো ঐতিহাসিকও ভারতের ভাষাভিত্তিক রাজ্যের দাবীর আন্দোলনের সমান্তরালভাবে চলা ইতিহাস সৃষ্টিকারী বাঙলার ভাষা আন্দোলনের প্রভাব নিয়ে নিশ্চুপ। কীভাবে বাংলার ভাষা আন্দোলন ভারতের ভাষা ভিত্তিক প্রদেশের আন্দোলনে আর ভারতের ভাষা ভিত্তিক প্রদেশের আন্দোলন বাঙলার ভাষা আন্দোলনে প্রভাব রেখেছে সেই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানও ঐতিহাসিকভাবে জরুরী। কিন্তু আমরাও কি এ বিষয়ে গভীরভাবে কিছু অনুসন্ধান করেছি?

তথ্য সুত্রঃ ইন্ডিয়া আফটার গান্ধী, রামচন্দ্র গুহ

Share

One thought on “একুশে ফেব্রুয়ারি আঞ্চলিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে রেখে দেখা।

  1. পিনাকি দা আপনার বরাবর এটা আমার ফাস্ট কমেন্ট ।
    বিষয়টি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের মধ্য আপনাকেই আমার পারফেক্ট মনে হয়েছে।
    আশা করছি আপনার কাছ থেকে একটি সন্তোষজনক উত্তর পাবো। অন্ততপক্ষে আমার কমেন্ট পড়েছেন এতোটুকু ফিডব্যাক পেলেও খুশি হব।

    ভাষা বিতর্ক

    FB.Motahar Hosen/বুদ্ধিবৃত্তিক গ্রুপ

    Link –

    https://m.facebook.com/groups/451760481905444?view=permalink&id=857987221282766

    কায়দে আজম মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ কি বাংলা ভাষার শত্রু ছিল?

    সবার আগে আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটি এর ছাত্রদের কাছে জানতে চাই, জিন্নাহ ঢাকা ইউনিভার্সিটি এর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্টেট ল্যাংগুয়েজ নিয়ে কি বলেছিল সেই ভিডিওটি আপনি কোন সময় ইউটিউব থেকে দেখার প্রয়োজন বোধ করেছেন? তিনি কি আসলেই বাংলা ভাষার শত্রু ছিলেন? আমি জিন্নাহ সাহেবের ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণটির অডিওটি নিচে যুক্ত করছি৷ দয়া করে ৪০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের অংশটি মনোযোগ দিয়ে শুনবেন৷

    কায়দে আজম বলেছিলেন
    ” পাকিস্তানের স্টেট ল্যাংগুয়েজ হবে উর্দু কিন্তূ প্রাদেশিক ভাষা কি হবে সেটা উক্ত প্রদেশের মানুষ চয়েস করবে৷ কিন্তূ ভিন্ন ভাষাভাষী বিভিন্ন প্রদেশের মানুষের কমিউনিকেশনের জন্য লিংগুয়া ফ্রাংকা হবে উর্দু। ”

    তার মানে কায়দে আজম বাংলা, পাঞ্জাবী, সিব্ধি, পশতু, বেলুচি ভাষাকে বিলুপ্ত করে দিতে বলেন নাই৷ উনি বুঝাতে চেয়েছিলেন যে প্রতিটি প্রদেশের নিজস্ব প্রাদেশিক ভাষা থাকবে কিন্তু যখন ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশের মানুষ কমিউনিকেশন করতে চাইবে তখন তারা মাধ্যম হিসাবে উর্দুকে ব্যাবহার করবে৷ তার মানে দাড়াচ্ছে উনি বাংলাকে ইস্ট পাকিস্তানের প্রাদেশিক ভাষা হিসাবে মেনে নিয়েছিলেন, এটা নিয়ে উনার কোন আপত্তিও ছিল না। মানে এক কথায় ইস্ট পাকিস্তানের অফিস, আদালত, প্রাদেশিক এসেম্বিলি সব কিছু চলবে বাংলায় কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের দাপ্তরিক কাজ চলবে উর্দুতে। ঠিক একই ভাবে খাইবার পাখতুনিয়া প্রদেশের সব কাজ চলবে পশতুতে, সিন্ধু প্রদেশের সব কাজ চলবে সিন্ধি ভাষায়।

    একটি কথা বলে রাখি জিন্নাহ সাহেব ছিলেন গুজরাটি, উনার মাদার ল্যাংগুয়েজ উর্দু ছিল না। পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ( ৫২%) কথা বলত পাঞ্জাবী ভাষায়। এরপর ২০% লোক কথা বলত সিন্ধি ভাষায়। বাকীরা কথা বলত পশতুন আর বেলুচি ভাষায়৷ উর্দু কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষা না৷ উর্দু মূলত ভারতের একটা ভাষা। মুঘল আমলে আরবী, তুর্কী, ফারসি ভাষার সাথে স্থানীয় খরবলি ভাষার মিশ্রনে উর্দু ভাষার জন্ম হয়।

    উর্দু ভাষা মুঘল আমলের শেষ দিকে অফিশিয়াল ভাষা হয়। এরপর উপমহাদেশের মাদ্রাসাগুলোতে উর্দুকে পড়ালেখার মাধ্যম হিসাবে গ্রহন করে। ব্রিটিশ বিরোধী সকল আন্দোলনে উপমহাদেশের মুসলিমরা নিজেদের ভেতর কমিউনিকেশন এর জন্য উর্দু ব্যবহার করত৷ লাহোর প্রস্তাব ও এই উর্দু ভাষাতেই দেয়া হয়৷ একে ফজলুল হকের উপাধি ” শেরে বাংলা” শব্দটিও উর্দু। যেহুতু উপমহাদেশের শিক্ষিত মুসলিমরা বিগত ৩০০ বছর ধরে উর্দু ব্যাবহার করে আসছে এবং সেই মুঘল আমল থেকে মাদ্রাসাগুলোতে উর্দু পড়ানো হত তাই এই ভাষার সাথে উপমহাদেশের মুসলিমদের একটা আবেগ জড়িত ছিল৷ এই কারনেই কায়দে আজম উর্দুকে স্টেট ল্যাংগুয়েজ, আর বাংলা, সিন্ধি, পাঞ্জাবী, পশতুন, বেলুচিকে প্রাদেশিক ভাষা হিসাবে গ্রহন করেন৷

    ধরুন আপনি একজন বাংগালি অফিসার৷ আপনার পোষ্টিং হল পাঞ্জাবের লাহোরে৷ লাহোরের লোকেদের ভাষা পাঞ্জাবী৷ তারা বাংলা জানে না৷ আবার আপনি পাঞ্জাবী জানেন না৷ তাহলে উভয়ের কমিউনিকেশন এর জন্য একটা ৩য় ভাষা প্রয়োজন? কি ঠিক না? সেই ৩য় ভাষা হিসাবে উর্দুকে বেছে নেয়া হয়। কারণ ভাষাটির সাথে উপমহাদেশের মুসলিমদের আবেগ জড়িয়ে ছিল। আমাদের শেষ মুঘল সম্রাট এই উর্দু ভাষাতেই অসংখ্য কবিতা লিখে গিয়েছেন। আজও বাংলাদেশের কাওমি মাদ্রাদাগুলোতে লেখা পড়ার মাধ্যম হিসাবে উর্দু ব্যাবহার করা হয়৷

    মন্তব্য

    আমি
    পাকিস্তানিরা এই সব আউল ফাউল যুক্তি তখনো দিছিলো সেগুলো তখনই পোস্টমর্টেম করেছিলেন বিশিষ্ট ভাষাবিদ ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ।

    মোতাহার হোসেন
    শহীদুল্লাহর লজিকগুলো বাংলাদেশ নামক একক জাতি রাষ্ট্রের জন্য উপুযুক্ত হলেও পাকিস্তানের মত ৫০ টি ভিন্ন ভাষাভাষী রাস্ট্রের জন্য উপুযুক্ত ছিল না। আর জিন্নাহর ভাষনে ইললজিকাল কি পেলেন? এই প্রদেশের ভাষাতো বাংলাই হচ্ছিল তাহলে সমস্যা কি?

    আমি
    মোতাহের হোসেন
    এটাও ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি পন্ডিদদের অন্যতম যুক্তি
    ‘বাংলা ভাষা পূর্ববাংলার একক জাতি রাষ্ট্রের জন্য উপুযুক্ত হলেও পাকিস্তানের মত ৫০ টি ভিন্ন ভাষাভাষী রাস্ট্রের জন্য উপুযুক্ত না বরং সার্বিক বিচারে পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষায় উর্দুই পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা হওয়া উচিত ’
    উপমহাদেশের বিশিষ্ট ভাষাবিদ ড.মুহাম্মদ শহিদুল্লার ভাষাকেন্দ্রিক ভাষ্যটি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের এই সমস্ত আবোল তাবল যুক্তির বিপরীতেই বাংলা ভাষারি ইউনাইটেড পাকিস্তানের জাতিয় ভাষায় মর্যাদা পাওয়া উচিত কারন সেটাই পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা মর্মে।
    আর ভাইজান গ্যাঞ্জাম টা প্রাদেশিক ভাষা কি বাংলাই থাকবে কি থাকবে না সেটা নিয়ে ছিলনা,ছিল বাংলা নয় শুধু উর্দু হবে পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা সেটা নিয়ে, এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই দিন জিন্নাহ সাহেব আবারো পশ্চিম পাকিস্তানের সেই ভাষ্যরি প্রতিধ্বনি করেন উর্দুই হবে একমাত্র পাকিস্তানের জাতিয় ভাষা।
    আর জিন্নাহর উপর বাংগালীর খোবটা ছিল সেইখানটাতেই।

    মোতাহার হোসেন
    Md Mahdi Hasan আরে ভাই, কেন বাংলাকে কেন্দ্রীয় সরকারের ভাষা বানাতে হবে? কোন লজিকে? জাস্ট ৫৬% লোক এই ভাষায় কথা বলে এই কারনে? আর উর্দু কি পশ্চিম পাকিস্তানিদের মাদার ল্যাংগুয়েজ ছিল? তারা যদি তাদের মাদার ল্যাংগুয়েজ পাঞ্জাবি, পশতুন, বেলুচি বাদ দিয়ে উর্দু গ্রহন করতে পারে তবে আমরা কেন পারব না? বাংগালিদের রেসিজম এর কারনেই উর্দু গ্রহনে সমস্যা ছিল৷ আর ধরে নিলাম যে বাংলাকে স্টেট ল্যাংগুয়েজ ঘোষণা করা হল৷ তাহলে একজন বাংগালি ম্যাজিস্ট্রেট এর পোস্টিং যদি পেশোয়ারে হয় তবে সে পেশোয়ারের জনগনের সাথে কোন ভাষায় কমিউনিকেশন করবে? পেশোয়ারের জনগন তো বাংলা জানেনা৷ আবার বাংগালি ম্যাজিস্ট্রেট তো পশতু জানে না৷ তাহলে ৩য় ভাষা হিসাবে তো একটা কমন ভাষাই দরকার৷ কি তাই না? না কি আপনি চান যে পশ্চিম পাকিস্তানের পাঞ্জাবী, পাঠান, বেলুচ, সিন্ধি, হাজারা, কাস্মিরী সবাই বাংলা শিখে আমাদের সাথে কনিউনিকেশন করবে? না কি আমরা পাঞ্জাবে পোষ্টিং পেলে পাঞ্জাবী শিখব এরপর পাঞ্জাব থেকে সিন্ধতে বদলি হলে সিন্ধি শিখব, এরপর সিন্ধু থেকে বেলুচিস্তানে বদলি হলে বেলুচি শিখে নিব? আবার দেশের বাইরে পাকিস্তান কে রিপ্রেজেন্ট করতে ও তো একটা ভাষা দরকার৷ কোন ভাষায় জাতীয় সংগীত গাওয়া হবে? নাকি হাফ বাংলায় আর বাকি হাফ উর্দুতে গাইব? এসব প্রশ্নের কোন উত্তর আছে আপনার কাছে?

    আমি
    মোতাহের হোসেন
    অবশ্যই আছে। পাকিস্তানে যদি কোন ভাষাকে জাতিয় ভাষা করতেই হয় তবে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ যে ভাষায় কথা বলে সেই ভাষাটিকেই করতে হবে এটাই গণতন্ত্র।
    পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা কি হওয়া উচিত এই মর্মে কোন গণভোট দেওয়ার হেডাম ছিল জিন্নার?
    উনি তো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে।

    মোতাহার হোসেন
    Md Mahdi Hasan তার মানে আপনি চান যে পাঞ্জাবী, পাঠান, বেলুচ, সিন্ধ, কাস্মিরী, হাজারা, গুজরাটি মুহাজির, তামিল মুহাজির সবাই বাংলা শিখবে। ওরা বাংলা শিখে সিভিল সারভিস এক্সামে বাংলা ভাষায় পরীক্ষা দিবে আর আমরা মাদার ল্যাংগুয়েজ বাংলায় পরীক্ষা দিব৷ বাহ কত সুন্দর লজিক৷ আপনি ৫২% তাই গনতন্ত্রে আপনি জিতবেন ভোটে৷ সুতরাং ৪৮% কে আপনি শাসন করবেন। হ্যা এটাই গনতন্ত্র৷ ভারতেও গনতান্ত্রিক উপায়েই হিন্দুরা হিন্দুত্ববাদ মুসলিমদের উপুর চাপিয়ে দিচ্ছে৷ আর আপনি ও গনতান্ত্রিক উপায়ে পাঞ্জাবী, পাঠান, বেলুচিদের উপর নিজের ভাষা চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেন। কত সুন্দর৷ একজন বেলুচি বহু কষ্ট করে বাংলা শিখে চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিবে আর আপনি নিজের মায়ের ভাষায় চাকরি পরীক্ষা দিবেন৷ বেলুচিকে চাকরি পেতে হলে আপনার ভাষা শিখে আবার আপনাকেই হারিয়ে চাকরি পেতে হবে৷ বাহ এর থেকে ইনসাফ কি আর হয়৷ আমরা সংখ্যাগুরু, আর তাই সংখ্যালঘুদের মালিক তো আমরাই হব৷ তাদের চাকরি পেতে হলে আমার ভাষায় পরীক্ষা দিয়ে আমার থেকেই বেশী নম্বর পেতে হবে৷ বাহ সুন্দর লজিক৷ আপনাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠিয়েছি। এক্সেপ্ট করলে খুশী হতাম।

    আর জিন্নাহ কি তার নিজের ভাষা চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল? উর্দু কি জিন্নাহর ভাষা ছিল? উর্দু কি পশ্চিম পাকিস্তানিদের ভাষা ছিল? পাঞ্জাবী, পাঠান, বেলুচ, সিন্ধ , কাস্মিরী, বাংগালি সবাই মিলে একটা ৩য় ভাষাকে গ্রহন করলে সমস্যা কোথায়? অন্যরা উর্দু শিখতে পারলে আমরা কেন পারব না৷ এমন তো নয় যে জিন্নাহ পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষা আমাদের উপুর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে৷ পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল কোন ভাষাভিত্তিক জাতিয়তাবাদের উপুর নয় যে বেলুচিরা মাত্র ৫% বলে তাদের কে ৫২% বাংগালির ভাষা শিখতে হবে৷ রাষ্ট্রে ইনসাফ রাখতে হলে সবাইর সাথে সমান আচরণ করতে হবে৷ কেও সংখ্যালঘু বলে তাকে তাকে সংখ্যাগুরুর ভাষা শিখে চাকরি পেতে হবে এটা ইনসাফ নয়৷ বরং ইনসাফ হল সবাই মিলে ৩য় একটা ভাষা শেখা৷ আর জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংগালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা পাকিস্তানের মোট ভুখন্ডের ৮০% এর মালিক ছিল৷ মানে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ৮ লক্ষ স্কয়ার কিমি জমি পাকিস্তান কে দিয়েছিল যেখানে পুব পাকস্তানের শেয়ার ছিল মাত্র দেড় লক্ষ স্কয়ার কিমি।
    আর জনসংখ্যার অনুপাত তো পরিবর্তন হয়৷ যেমন ৭১ সালে পুব পাকিস্তানে জনসংখ্যা বেশী থাকলেও ২০১৯ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের জনসংখ্যা বাংলাদেশ থেকে বেশী৷ তাহলে তার মানে কি স্টেট ল্যাংগুয়েজ সরকারের মত৷ প্রতি ৫ বছর পর পর ভোট হবে, যখন যে সংখ্যায় বেশী হবে তখন সেটা স্টেট ল্যাংগুয়েজ হবে? এখন যদি বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে থাকত তবে বাংগালিরা হত ৪৫% এর মত আর পশ্চিম পাকিস্তানিরা হত ৫৫% এর মত। জনসংখ্যার অনুপাতের উপুর স্টেট ল্যাংগুয়েজ নির্বাচন করা কতটা লজিকাল কারন জনসংখ্যার অনুপাত তো পরিবর্তন হয় সময়ের সাথে। কিন্ত স্টেট ল্যাংগুয়েজ তো আর সময়ের সাথে পপরিবর্তন করা সম্ভব না

    আমি
    মোতাহের হোসেন
    পুরো কমেন্টাই ছিল হাস্যকর আর প্রতিটি ইঞ্চিই ছিল পাকিস্তানিদের কপি-পেস্ট।

    ‘আপনি চান যে পাঞ্জাবী, পাঠান, বেলুচ, সিন্ধ, কাস্মিরী, হাজারা, গুজরাটি মুহাজির, তামিল মুহাজির সবাই বাংলা শিখবে। ওরা বাংলা শিখে সিভিল সারভিস এক্সামে বাংলা ভাষায় পরীক্ষা দিবে আর আমরা মাদার ল্যাংগুয়েজ বাংলায় পরীক্ষা দিব৷ বাহ কত সুন্দর লজিক৷’

    একমাত্র উর্দুই যদি পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হত সেই খেত্রে কি পাঞ্জাবি, পাঠান,বেলুচ, সিন্ধ কাস্মিরী,হাজারা, গুজরাটি মুহাজির তামিল মুহাজির তাদের সেই ভাষাটিও শিখে নিয়েই তার পরেই সিভিল সার্ভিস এক্সামে পরিক্ষা দিতে হতো না!

    বাংলা ভাষাটি যেভাবে তাদের আয়ত্ত করা নেই ঠিক তেমনি উর্দুও তাদের জন্য বিদেশি ভাষা।
    সেই ক্ষেত্রে ২ টা ভাষার যেটাই তাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা করা হত সেটাই তাদের শিখে নিতেই হতো।

    ২.উর্দুর কোন যৌক্তিকতা নেই, কারণ এটা পাকিস্তানের কোন অংশেরি ভাষা নয়, এটা একটি বিদেশী ভাষা। তাহলে একটি বিদেশী ভাষা কেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে মর্যাদা পাবে!!!

    পাকিস্তানের সমগ্র অঞ্চলের প্রধান সাতটি ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষা অর্ধেকেরও বেশি মানুষের মাতৃভাষা এবং অন্য ছয়টি ভাষায় অর্ধেকেরও কম মানুষ কথা বলে। এমতাবস্থায় যে কোন বিচারে একমাত্র বাংলা ভাষা ই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবার অধিকার রাখে।
    সেখানে দাবি করা হয়েছিল বাংলাকে পাকিস্তানের ‘অন্যতম’ রাষ্ট্রভাষা এবং পূর্ব পাকিস্তানের সরকারী ভাষা ও শিক্ষার বাহন করা হোক।

    কারণ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই মুদ্রা, নিত্যব্যবহার্য খাম, ডাক টিকেট, রেল গাড়ির টিকিট, বিভিন্ন ধরনের সরকারি ফরম এবং অফিস-আদালতে ইংরেজি ও উর্দু ভাষাই ব্যবহৃত হতে থাকে। এর ফলশ্রুতিতে পূর্ববাংলার শিক্ষিত সচেতন মহল বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ভাষা আন্দোলনের এটাই ছিল প্রত্যক্ষ ও সব চেয়ে বড় কারন।

    ৩, বাংলা এবং উর্দু যেটাকেই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হোক আসলে সেটাই শিখে নিতে হবে,সেই ক্ষেত্রে বাংলাই বরং বেশি সুবিধা, কারণ বাংলা পাকিস্তানের নিজস্ব ভাষা এবং পাকিস্তানের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের মুখের ভাষা অলরেডি তা হয়েই আছে, সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানের কম সংখ্যক লোককেই তা আয়ত্ত করতে হত।

    কিন্তু যদি উর্দুই হত, সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষকেই তা আয়ত্ত করতে হতো।

    ‘আর জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংগালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা পাকিস্তানের মোট ভুখন্ডের ৮০% এর মালিক ছিল৷ মানে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ৮ লক্ষ স্কয়ার কিমি জমি পাকিস্তান কে দিয়েছিল যেখানে পুব পাকস্তানের শেয়ার ছিল মাত্র দেড় লক্ষ স্কয়ার কিমি।’

    একটি রাষ্ট্রের ভাষা নির্দিষ্ট করতে কোন জায়গার কত পারসেন্ট মানুষ কোন ভাষায় কত পারসেন্ট কথা বলে সেটা বিবেচনায় নেয়ার পাশাপাশি, যদি কার ভাগে কতটুকু জমি আছে সেটাও বিবেচনায় নেয়া হয় তাহলে জমিরো যে ভাষা আছে আগে সেটা প্রমাণ করতে হবে।

    ‘আপনাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠিয়েছি। এক্সেপ্ট করলে খুশী হতাম।’

    ভাই আমি অলরেডি আমার ফ্রেন্ডলিষ্টের ফেক আইডি গুলকে আনফ্রেন্ড করা শুরু করেছি কারন এটা আমার অরিজিনাল আইডি। পিক থেকে শুরু করে সব লিগেল ইনফো দেয়া আছে। সো এমতাবস্থায় আপনার রিকু একসেপ্ট করা সম্ভব নয় রিকোয়েস্ট ক্যান্সেল করলে খুশি হব।

    ‘আর জিন্নাহ কি তার নিজের ভাষা চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল?’

    ভাইজান চাপিয়ে দেয়া বলতে জনগণের অনুমতি ছাড়াই চাপিয়ে দিয়েছে মিন করেছি।

    ‘পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল কোন ভাষাভিত্তিক জাতিয়তাবাদের উপুর নয় যে বেলুচিরা মাত্র ৫% বলে তাদের কে ৫২% বাংগালির ভাষা শিখতে হবে৷ রাষ্ট্রে ইনসাফ রাখতে হলে সবাইর সাথে সমান আচরণ করতে হবে৷ কেও সংখ্যালঘু বলে তাকে তাকে সংখ্যাগুরুর ভাষা শিখে চাকরি পেতে হবে এটা ইনসাফ নয়৷ বরং ইনসাফ হল সবাই মিলে ৩য় একটা ভাষা শেখা৷’

    একটি রাষ্ট্র যখন তার রাষ্ট্রীয় ভাষা নির্দিষ্ট করবে তখন তো তার রাষ্ট্রের ভেতরে বসবাসরত মানুষের ভাষাই চুস করবে এটাই স্বাভাবিক , এবং সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ যে ভাষাটিতে কথা বলে সেই ভাষাটিকেই অগ্রাধিকার দিবে ,
    এবং সেটাই করা হত কিন্ত সেটা করতে গেলে যে, যেই বাঙ্গালীদের পছন্দ করিনা সে বাঙ্গালীদের ভাষাটাই সার্বিক যুক্তিতে সবার অগ্রভাগে এসে দাঁড়ায়, আর বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা করা হলে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি পাকিস্তানে আরো শক্তিশালী অবস্থানে চলে যাবে, সেই সাথে সাথে বাঙালিরাও পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোর আরো নিকটবর্তী অবস্থানে চলে যায়, তাহলে যে তাদের আর কোন অবস্থাতেই কোণঠাসা করা যাবে না , তাই প্রয়োজন বোধে উর্দু ভাষা ধার করে এনে সেটাকে সংকীর্ণ আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং ধর্মের মিথ্যা দোহাই মূলক বিভিন্ন যৌক্তিকতার রংচং দিয়ে হলেও সেটা রুখে দিতে হবে।

    ভাষা আন্দোলনের যে ৩ টি পর্ব আমরা দেখতে পাই

    তা হচ্ছে

    ক. পাকিস্তান- পূর্ব ভাষা বিতর্ক।

    খ. ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্ব (১৯৪৭-৪৮)

    গ. ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব (১৯৫২)

    এই ক দিকে দেখলে আমরা দেখতে পাই যে এটা জিন্নাহদের প্রি প্ল্যানেই ছিল।

    পাকিস্তান জন্ম হওয়ার আগেই জিন্নাহরা এটা মাথায় রেখে ছিল যে পাকিস্তান হওয়ার পরে সাধারণভাবেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করতে গেলে ন্যাচারালি বা স্বভাবতি সেটা তো বাংলাকেই করতে হয়, কারণ পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখের ভাষা হিসেবে বাংলায় এগিয়ে আছে, সেটাকে যদি প্রত্যাখ্যান করতে হয় তবে কি করতে হবে,
    পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাষা পাঞ্জাবি, সেটা বাংলার ধারে কাছেও নেই মাত্র ২৮℅। তাই বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঠেকাতে প্রয়োজনে উর্দুকেই সামনে আনতে হবে ।

    সেই প্রি প্ল্যান অনুযায়ীই ১৯৩৭ সালেই মুসলিম লীগের তৎকালীন সভাপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে দলের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রবর্তনের উদ্যোগ নেন কিন্তু বাঙ্গালীদের নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক সেটা বুঝতে পারে যে, এটা হচ্ছে প্রথম স্টেপ এবং সেখানে শেরে বাংলা প্রচন্ড বিরোধিতা করে জিন্নার বিরুদ্ধে,সেই বিরোধিতায় জিন্নাহ কর্তৃক উর্দুকে দলের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রবর্তনের উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

    ভারত বিভক্তি এবং পাকিস্তান সৃষ্টির প্রাক্কালেই মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশবিশেষ, বিশেষ করে হাশিম-সোহরাওয়ার্দী ও তাদের অনুসারীরা পূর্ব বাংলার জনগণকে এই বিষয়ে অগ্রিম সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
    এবং পরে সেই শঙ্কাই সত্য তে পরিণত হয়েছিল।

    বাংগালী আন্দোলনের কাছে অবশেষে পাকিরা মাথানিচু করে ১৯৫৬ সালের সংবিধানের ২১৪ নং ধারা বলে বাংলাকে উর্দুর সাথে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিয়ে দেয়।

    কুত্তা তো ওই গু খায়ই খায় লেইট্টা ঘাইট্টা তারপরে খায়।

    সেই তো কথা শুনলি শুনলি মাঝখান দিয়া বাঙ্গালীদের কাছে আরো ক্রিমিনাল হিসেবে ধরা পড়লি।

    আফসোস আমি যার সাথে তর্কাতর্কি করতেছি সে পাকিস্তানের কোন নাগরিক না বরং সে একজন বাঙালি, বাংলার টা খেয়ে বাংলার টা পড়ে বাংলার মুক্ত বাতাসে বড় হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিদের নোংরা ভাষ্যর প্ররোচনা চালায়,

    ভালো থাইকেন ভাই।

    তয় ভাই ব্যাপার না, স্বাধীন বাংলা থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা যাওয়ার সময় কিছু মা বোনের ইজ্জত লুটার মাধ্যমে আপনার মতন কিছু স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার বিজরে রাইখা গেছিল, তা তাদের কাওকে কাওকে যে কখনো কখনো খুইজা পাওয়া যাইবো সেটাও অগ্রিম জানা।

    কারণ ১৯৭১ এ ফাকিস্তানি সৈনিকরা যখন নিয়াজির অধীনে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছিল সেই সময় এক পাকিস্তানী সৈন্য ভিড় করা বাঙ্গালীদের উদ্দেশ্যে একটি বাণী ছেড়েছিল।

    বাঙালিদের প্রতি পরাজিত সেই পাকিস্তানী সেনার উক্তিঃ

    হাম যা রাহে হ্যায়, লেকিন #বীজ_ছোড়_কার যা রাহে হায়।

    মোতাহার হোসেন
    Md Mahdi Hasan ১/ উর্দু হোক আর বাংলা হোক সেটা পাঞ্জাবী, সিন্ধি, বেলুচ, পাঠানদের শিখতেই হত৷
    কিন্তূ রাষ্ট্র ভাষা উর্দু হলে সেটা বাংগালি আর পাঞ্জাবী, পাঠান সবার কাছেই ফরেন ল্যাংগুয়েজ হত৷ এই ক্ষেত্রে চাকরি পরীক্ষার হলে কেওই বেনেফিট অফ ন্যাটিভ স্পিকারের সুভিধাটি পেত না৷ সবার জন্যই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হত।

    অপর দিকে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করা হলে, পাঞ্জাবী, পাঠানদের বাংলা শিখে বাংগালীদের বিরুদ্ধেই চাকরির পরীক্ষায় নামতে পারত৷ এই ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকছে না৷
    সুতরাং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার জন্য এমন একটি ভাষাকে স্টেট ল্যাংগুয়েজ করা দরকার ছিল যেটা কারোর মাদার ল্যাংগুয়েজ না৷ সবার জন্য যেন সমান অপুরসুনিটি থাকে৷

    ২/ পাকিস্তান কোন অঞ্চল ভিত্তিক বা জাতি ভিত্তিক রাষ্ট্র ছিল না৷ পাকিস্তানের ভিত্তি ছিল উপমহাদেশের সকল মুসলিমের জন্য একটা আলাদা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করা৷ সুতরাং যাকিছু এই উপমহাদেশের মুসলিমদের কালচার, ইতিহাসের অংশ সেটা পাকিস্তানের ও অংশ৷ উর্দু এই উপমহাদেশের মুসলিমদের একটা ভাষা৷ দিল্লীর মুঘল সুলতানতের আমলে গড়ে উঠেছিল৷ সুতরাং উর্দুকে বিদেশী ভাষা বলার কোন অপুরসুনিটি নেই৷ উর্দু উপমহাদেশের একটি ভাষা আর উপমহাদেশের মুসলিমদের একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়েই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷

    ৩/ জন সংখ্যার অনুপাত নিত্য পরিবর্তনশীল। সুতরাং জন সংখ্যার অনুলাতের উপুর ভিত্তি করে রাষ্ট্র ভাষা নির্বাচন করা একটা পাগলামি ছাড়া কিছু না৷ যেসব রাষ্ট্রে বহু ভাষাভাষী মানুষ বসবাস করে সেসব রাষ্ট্রে সেই ভাষাকে স্টেট ল্যাংগুয়েজ করা হয় যেটা হয় লিংগুয়া ফ্রাংকা৷ ইন্দোনেশিয়াতে জাভানিজ রা সংখ্যাগুরু হওয়ার পরও মালয় ভাষার একটা উপভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করা হয়েছে। সেই ভাষার নাম দেয়া হয়েছে ভাষা ইন্দোনেশিয়া৷ আজকে যে ৫২%, ৪০ বছর পর সে ৪৮% হয়ে পড়ছে৷ কিন্ত রাষ্ট্র ভাষা তো আর বছর বছর পাল্টানো সম্ভব না৷

    জিন্নাহ সাহেবের বাংগালি বিরোধিতা নিয়ে যেটা লিখেছেন সেটা কাল্পনিক মনগড়া।

    Md Mahdi Hasan ৪/ পাকিস্তান রাষ্ট্রটি তৈরি হয়েছিল উপমহাদেশের সকল মুসলিম এক জাতি এই চেতনা নিয়ে৷ এখন এই মুসলিম জাতিয়তাবাদী চেতনায় ফাটল ধরিয়ে কেও যদি বাংগালী জাতিয়তাবাদ বা পাঞ্জাবী জাতিয়তাবাদ এর ভিত্তিতে নিজেদের ক্ষমতা সুসংহত করে সমস্ত পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রন নেয়ার চেষ্টা করে তবে সেটা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার চেতনার পরিপন্থী৷ আপিনি দাবি করছেন যে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করলে বাংগালী জাতিয়তাবাদ আরা শক্তিশালী হত৷ পাকিস্তানের মুসলিম জাতিয়তাবাদী চেতনার ভেতর বাংগালি, পাঞ্জাবী, গুজরাটি চেতনার কোন স্থান নেই৷ সুতরাং এসব চেতনা পাকিস্তান রাষ্ট্রের ইউনিটির জন্য হুমকি৷ তাই কোন আঞ্চলিক ভাষাকেই রাষ্ট্র ভাষা করার প্রশ্নই আসে না৷ ১৯০৬ থেকে ১৯৪৭ আমরা যখন পাকিস্তানের জন্য আন্দোলন করেছিলাম তখন কোন বাংগালি কালচার বা পাঞ্জাবি কালচার বা তামিল কালচারের চেতনা দিয়ে লড়াই করে নাই৷ লড়াই করেছি পিউর মুসলিম জাতিয়তাবাদী চেতনা দিয়ে৷ সুতরাং পাকিস্তানে এমন কোন ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করা উচিত হবে না যেটার মাধ্যমে ভাষাভিত্তিক জাতিয়তাবাদ প্রমোট হয়৷

    ৫/ একটা রাষ্ট্র এর রাষ্ট্র ভাষা কি হবে সেটা ডিপেন্ড করে রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাস, রাষ্ট্রের ডেমোগ্রাফি, রাষ্ট্রের ক্যারেক্টারের দিক বিবেচনা করে৷ যেসব রাষ্ট্র থিওলজিকাল স্টেটমেন্ট এর উপুর গড়ে উঠে সেসব রাষ্ট্রে ভাষা চয়েস করা হিস্টোরিকাল ব্যাকগ্রাউন্ড আর রাষ্ট্রের আইডলজির সাথে মিল রেখে৷ পাকিস্তান একটা আরটিফিশিয়াল থিওলজিকাল স্টেট৷ তাই এই রাষ্ট্রের ভাষা চয়েস হবে আইডলজির সাথে ম্যাচ করে৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ এর ভাষার উপুর ভিত্তি করে নয়৷

    ৬/ পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটিতে পপুলেশনের দিক দিয়ে বাংগালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠতার হলেও ডেমোগ্রাফির দিক দিয়ে বাংগালিরা ছিল মাইনোরিটি৷
    ডেমোগ্রাফি হল কোন জাতি কতটুকু এলাকা জুড়ে বসবাস করে সেই চিত্র৷
    ডেমোগ্রাফিকালি পাঞ্জাবীরা ছিল সংখ্যাগুরু। রাষ্ট্র ভাষা নির্বাচন এর সময় ডেমোগ্রাফিকে অব্যশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে৷ বাংলা ভাষার বিস্তার ছিল মাত্র দেড় লক্ষ স্কয়ার কিমি এর ভেতর৷ তার বিপরীতে পাঞ্জাবি ভাষার বিস্তার ৩ লক্ষ স্কয়ার কিমি৷

    Md Mahdi Hasan ওয়ার্ধা (Wardha) শিক্ষা পরিকল্পনা অনুযায়ী, কংগ্রেসের সময়ের সাথে সাথে ইংরেজির বদলে হিন্দুস্তানিকে জাতীয় ভাষা হিসেবে প্রতিস্থাপিত করার চেষ্টা বিতর্কের জন্ম দেয়। হিন্দি ও উর্দুর সমন্বয়ক ভাষা হিসেবে হিন্দুস্তানিকে প্রতিষ্ঠা করার কংগ্রেসের এ চেষ্টা হিতে বিপরীত হয় কারণ, স্বয়ং হিন্দি ও উর্দুপ্রেমীরাই এর বিরুদ্ধে ক্ষেপে ওঠে। এই ক্ষোভ শুধুমাত্র যে উত্তর ভারতীয় উর্দুভাষী মুসলমানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো তা নয়, বরং [অবিভক্ত] বাংলার প্রধানমন্ত্রী ফজলুল হকও উর্দুকে জাতীয় ভাষা করার দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। শেরে বাংলা ঘোষনা দেন যে, তার অধীনে [বাংলা] প্রদেশে মাদ্রাসার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে যেন উর্দু, ফার্সি ও আরবিকে আরো বেশি ছড়িয়ে দেওয়া যায়। যদিও বাংলা ছিলো মাতৃভাষা এবং পাঠদানও হবে এই ভাষাতেই, তবুও [ফজলুল] হক উর্দুকে মুসলমান ছাত্রদের জন্য আবশ্যিক ভাষা হিসেবে অধিভুক্ত করার প্রতি জেদ ধরে থাকেন, যাতে তারা ইসলামের স্পিরিট থেকে দূরে সরে না যায়। যদিও এখন ভারত-ভাগ পরবর্তী সময়ে পূর্ব-পাকিস্তানীদের সিদ্ধান্তকে ভিন্ন হিসেবে দেখা হয়, [কিন্তু] হক [সেসময়] সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, যদিনা বাঙালিরা উর্দুকে তাদের ধর্মীয় ভাষা হিসেবে গ্রহণ করে, তাহলে স্থানীয় ইসলাম-বিরোধী পরিবেশের প্রভাবে তাদের ছেলে-মেয়েরা বি-মুসলমানীকরণের শিকার হবে। এমনকি হক দুঃখ করে বলেছিলেন যে, প্যান-ইসলামিস্ট কার্যক্রমে বাঙালি মুসলমানদের পিছিয়ে থাকার কারণ হলো উর্দু না জানার কারণে ভাষাগত ও কৃষ্টিক (culturally) দিক দিয়ে ভারতের অন্যান্য মুসলমানদের থেকে তাদের [বাঙালি মুসলমান] বিচ্ছিন্ন থাকা। তাই হক তাদেরকে আবশ্যিকভাবে এই ভাষা [উর্দু] শিখার মাধ্যমে ইসলামি ভ্রাতৃসংঘের পুরোদস্তুর-সক্রিয় কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।”

    – Venkat Dhulipala এর ‘Creating a New Medina: State Power, Islam and The Quest for Pakistan in Late Colonial North India’ থেকে অনুদিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter