জাতীয় বাজেট ঘোষিত হতে যাচ্ছে কয়েকদিনের মধ্যেই। স্বাস্থ্য বাজেটও ঘোষিত হবে। স্বাস্থ্য বাজেট কেমন
হচ্ছে গত কয়েক বছর, সামনে কেমন স্বাস্থ্য বাজেট আমরা চাই সেটা নিয়ে স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন এমন কারো উৎসাহ চোখে পড়লো না। স্বাস্থ্যে ব্যয় বরাদ্দ একটা বড় ইস্যু সন্দেহ নাই কিন্তু এর পাশাপাশি বদলে যাওয়া স্বাস্থ্য সমস্যার চিত্র, মহানগর মফঃস্বলের বৈষম্য, চিকিৎসা সেবার মান এসব চ্যালেইঞ্জ মোকাবেলার জন্য যুতসই স্বাস্থ্য অর্থায়ন কি করছে আমাদের স্বাস্থ্য বাজেট?
আমাদের স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৪% শতাংশ খরচ করতে হয় নিজের পকেট থেকে। স্বাস্থ্যখাতের সামগ্রিক ব্যয়ের মধ্যে ২৩.০৯ শতাংশ পূরণ হয় বাজেটের মাধ্যমে আর বাকি দুই-তৃতীয়াংশ পূরণ হয় জনগণের নিজের পকেট থেকে । প্রতিবেশী দেশ ভারতে স্বাস্থ্যখাতে সরকারি ব্যয় ৩৩ শতাংশ, নেপালে ৪০ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৪৫ শতাংশ। জাতীয় স্বাস্থ্য হিসাবে ২০০৭-১২ অনুযায়ী, বাংলাদেশে বাৎসরিক মাথাপিছু চিকিৎসা ব্যয় ২৭ মার্কিন ডলার যেখানে ২০০৭ সালে এই হার ছিল ১৬ মার্কিন ডলার এবং ১৯৯৭ সালে ছিল মাত্র ৯ মার্কিন ডলার। এই ৬৪% শতাংশ ব্যায়টা কমিয়ে ২০৩২ শালের মধ্যে কমিয়ে ৩২% করার, সরকারি ব্যয় ২৪% থেকে ৩০% উন্নীত করা, দাতা সংস্থা থেকে নেয়া ৮% কে কমিয়ে ৫% করার একটা প্রস্তাব করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকারকে দিয়েছে। এবং পরিকল্পনা হিসেবে স্বাস্থ্য বীমা প্রণয়নের
রিকল্পনা বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব দিয়েছে। মুল প্রশ্ন উহ্য থেকে গেছে, সেটা হচ্ছে এই বীমা ব্যবস্থাপনা কে করবে? সরকার নাকি বেসরকারী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান? বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের হাতে দেয়া বীমা কোম্পানির লাগামছাড়া মুনাফা কী সর্বনাশ করেছে অ্যামেরিকান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সেটা পৃথিবীর কাছে একটা জলজ্যান্ত উদাহরণ হয়ে আছে। স্বাস্থ্য অর্থায়নে আমরা আসলে কোন মডেল অনুসরণ করিনা, সেটাও একটা সমস্যা। আমাদের স্বাস্থ্য অর্থায়নের মডেল অতি জটিল এবং সকল মডেলের এক বিশ্রী জগাখিচুরি।
স্বাস্থ্যখাতের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নীতি হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে সকল প্রকার সংক্রামক রোগ দূর করা, গড় আয়ুষ্কাল ৭০ বছরে উন্নীত করা এবং প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যুর হার ১৫ শতাংশ নামিয়ে আনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একটি মানসম্মত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালাতে হলে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ জিডিপি’র ৫ শতাংশ হওয়া উচিত। কিন্তু তা এখন ১ শতাংশের ও কম। শুধু তাই নয় গত সাত বছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের হার ২ শতাংশ কমেছে। জাতীয় বাজেটের আকার বাড়ায় মোট বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমান ঠিক থাকলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যয় সক্ষমতা কমেছে দারুনভাবে সন্দেহ নেই।
মহানগর আর মফঃস্বলের স্বাস্থ্য খরচে আছে বৈষম্য। যেসব জেলায় ধনী মানুষের বসতি বেশি সেসব জেলায় সরকারি ব্যয়ও বেশী। মোট স্বাস্থ্য বাজেটের ৪১ শতাংশ ব্যয় হয় ঢাকা জেলায় এবং চট্টগ্রাম জেলায় ব্যয় ১৮ শতাংশ। সবচেয়ে কম ব্যয় হয় সিলেট ও বরিশাল বিভাগে মাত্র ৫ ও ৫ শতাংশ যথাক্রমে।
স্বাস্থ্যখাত উন্নয়ন ও অনুন্নয়নমূলক ব্যয়ের মধ্যেও বিস্তর পার্থক্য দেখা যায়। উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা যেমন শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, শিশু ও মায়েদের টিকা প্রদান, ভিটামিন এ এর ঘাটতি
দূরীকরণ ইত্যাদি। সরকারি হাসপাতালগুলোতেও সাত থেকে আট হাজার চিকিতসকের পদ খালি রয়েছে। অনুমান অসঙ্গত নয় যে স্বাস্থ্য খাতে ক্রমাগত সংকুচিত অর্থায়ন চিকিৎসকের পদ পুরনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য চিত্র গত বিশ বছরে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। ধূমপান বেড়েছে, স্থুলতা বেড়েছে, ডায়াবেটিস সহ দীর্ঘমেয়াদি অনিরাময় যোগ্য রোগ বেড়েছে। ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অতিরিক্ত আর্থিক চাপ গ্রহন করার মতো উপযোগী করে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।
সার্বিক বিবেচনায় প্রাথমিকভাবে কয়েকটি প্রস্তাব রাখা যায়।
১/ স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ ন্যুনতম জিডিপির ৫% পর্যন্ত বৃদ্ধির বিকল্প নাই। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি হলে জাতীয় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এটা প্রমাণিত সত্য।
২/ স্বাস্থ্য অর্থায়নে জগাখিচুরি ব্যবস্থা বাদ দিয়ে, একক একটি মডেল অনুসরণ করতে হবে।
৩/বেসরকারি বিনিয়োগ আসলে সেখানে মুনাফার সর্বোচ্চ মাত্রা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। এবং চতুর্থ ও শেষ প্রসঙ্গ, তৃতীয় বিশ্বের সফল স্বাস্থ্যসেবা মডেল থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
এই প্রসঙ্গে কিউবার উদাহরণ দিতে চাই। কিউবা অ্যামেরিকার এক তৃতীয়াংশ আর ইউ কের অর্ধেক স্বাস্থ্য