আমি বিলোপবাদী নই, আদর্শবাদী।

ফেসবুকের স্ট্যাটাস নিয়ে তোলপাড় হলে সেটা সবসময় ফেসবুকারকে প্রীত করবে তা নয়। যেমন, আমার একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে বন্ধু সৈয়দ বোরহান কবির দৈনিক পত্রিকায় একটা উপসম্পাদকীয়ই লিখে ফেলেছে। শিরোনাম “ নিরপেক্ষতার মুখোশ খুলে আপনার পক্ষ হোক স্পষ্ট”। পাঁচটি বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে বোরহান বলতে চেয়েছে যে কিছু মানুষ আওয়ামী লীগ থেকে সুবিধা নিয়ে এখন ক্ষমতার শেষ পর্বে বি এন পি র সাথে ভিড়তে চাচ্ছেন। সেখানে চারজন রথি মহারথীর সাথে এই নগণ্য পদাতিক সম্পর্কে বোরহান লিখেছে। “ ফেসবুকে, ব্লগে তোলপাড় করা আমাদের এক বিপ্লবী বন্ধু। শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে তাঁর স্ট্যাটাস গুলো প্রেরণা জাগানিয়া। লেখেও দারুণ। শাহবাগ জাগরণের উদ্যোক্তাদের একজন। টক –শোতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে তাঁর প্রাণবন্ত কথায় চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠি। সম্প্রতি বিএনপি-জামাতপন্থী এক চিকিৎসক নেতার পক্ষে সাফাই গেয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিলেন। আমি তো থ। আমি বি এম এ মহাসচিবকে জিজ্ঞেস করলাম তিনি স্ট্যাটাস টা দেখেছেন কিনা। এম ইকবাল আর্সালান বললেন, দেখেছি। বিএনপিকে জানিয়ে দিলো, আমিও ছিলাম তোমাদের সাথে।“ লেখাটি আগে আমার চোখে পড়েনি। নাইমুল ইসলাম খান ফোন করে বলল, বোরহান কী তোমাকে নিয়েই লিখেছে? আমি বললাম হতেই পারে না, আমি এতো বড় তালেবর হইনি যে বোরহান আমাকে নিয়ে উপসম্পাদকীয় লিখবে। যেহেতু ভাববাচ্যে লেখা আমার বিশ্বাস ছিল যে এই বিপ্লবী আমি নই। বোরহানকে ফোন করতেই সে নিশ্চিত করলো –হ্যাঁ ব্যাক্তিটি আমিই। আমি এটাও বিশ্বাস করতে চাইনি যে ইকবাল আর্সালান স্যার এমন কথা বলেছেন। কিন্তু পত্রিকায় ছাপা উনাকে উধৃত করে বিশ্বাস না করেই বা উপায় কী? আমি একটা স্ট্যাটাস এ লিখেছিলাম, ডাব পাকলে যেমন নারকেল হয় তেমন বামপন্থী পাকলে হয় আওয়ামী লীগ। তেমন অনেক নারকেল মার্কা বামপন্থী আওয়ামী লীগের ঘারে সওয়ার হয়েছে। তাদেরকে নিয়ে যে প্রকৃত আওয়ামী লীগ স্বস্তিতে আছে সেটাও মনে হয়না। তবে তাদের বদৌলতে আওয়ামী লীগের মধ্যে একটা ধারণা হয়েছে সব ডাবই এক সময় নারকেল হবে এবং ঝুপ করে আওয়ামী লীগের কোলে পড়বে। আমি বি এম এর সাবেক সেক্রেটারি ডাঃ জাহিদকে নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, লিখেছিলাম তার আশু রোগমুক্তির কথা, লিখেছিলাম চিকিৎসক নেতা হিসেবে তার মুক্তির দাবী। আমি এটাও লিখেছিলাম তার রাজনৈতিক মতাদর্শের সাথে আমার দ্বিমত আছে। তবুও আমার স্ট্যাটাস এ আমার বন্ধু “থ”। এটা যেন জর্জ বুশের সেই দর্শন, হয় তুমি আমার সাথে অথবা আমার শত্রুর সাথে এর মাঝে কোন অবস্থান নেই। রাজনীতির ভিন্নমতকে রেষারেষিকে রুপান্তরিত করে সেটাকে ব্যাক্তিগত পর্যায় পর্যন্ত টেনে না নামাতে পারলে স্বস্তি নেই। এবং সেই নামানোটা এমনই হবে যে রোগমুক্তি চাওয়াও একটা অপরাধ বলে গণ্য হবে। ইকবাল আর্সালান স্যার এর বয়ানে যেটা বলা হয়েছে সেটা আরও মারাত্মক। আওয়ামী লীগের সাথে থাকা বলতে উনি কী বুঝিয়েছেন? উনি কী ভেবেছেন আমি আওয়ামী লীগের কর্মী, অথবা একজন সমর্থক? আমি কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতির যুক্ত ছিলাম? না ছিলাম না। একজন বামপন্থী হিসেবে কখনো কখনো যে কৌশলগত ঐক্য হয়েছে সেটাকে উনারা ধরে নিয়েছেন বিলীন হওয়া বলে। বামপন্থীরা বুর্জোয়াদের সাথে কখনো কখনো ঐক্য গড়ে, আবার সংগ্রামও করে কিন্তু ঐক্যের কারণে সংগ্রামকে বিস্মৃত হওয়ার নাম বিলোপবাদীতা। আমি বিলোপবাদীও নই। বাংলাদেশের সব বামপন্থীও যদি বুর্জোয়া দলে বিলীন হয় তবে এই নিঃসঙ্গ পদাতিক অভিমন্যুর মতো লড়াই করেই জীবন দেবে তবুও আদর্শের প্রশ্নে আপোষ করবেনা। জীবনে একবার যেটাকে সত্য বলে গ্রহণ করেছি তাঁর জন্য লড়াইটাকেই জীবনের ধ্রুবতারা করে রাখবো। আমাদেরকে আমাদের মতো থাকতে দিন, আমরা আমাদের দায়িত্ব, কর্তব্য, শক্তি, লক্ষ্য আর সীমাবদ্ধতা নিয়ে সম্পূর্ণ সচেতন। তবে আমার স্ট্যাটাস এ ফষ্টিনস্টি খুঁজে পেলেও আমার বন্ধুর লীলা কিন্তু ঠিকই চলছে। সে যে পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সে পত্রিকার ইন্টারনেট ভার্সনের প্রধান বিজ্ঞাপনটি ইসলামী ব্যাংকের। পিনাকী করলে ফষ্টিনষ্টি, বোরহান করলে লীলা। আহা! তো বন্ধু, তুমি তো আমার স্ট্যাটাস দেখে “থ” হয়েছ, আমি কী এখন তোমার বিজ্ঞাপন নীতি দেখে খন্ডত্ত হবো?

Share

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter