আমাদের দেশের মানুষের একটা বড় অংশের মধ্যে বেহুদা প্রাণী ঘৃণা আছে। অদ্ভুতভাবে মানুষের যে সবচেয়ে উপকারী এবং সবচেয়ে প্রভু বৎসল যে প্রাণী কুকুর, সেটা নিয়ে তাদের পর্বত প্রমাণ ঘৃণা। এই ঘৃণার উৎস অজানা। আর যেহেতু সে নিজে ফ্যাসিস্ট মনোবৃত্তির মানুষ তাই অন্য মানুষও ঘৃণা করুক সেটাই সে চায়। সে তার ঘৃণার বিস্তার চায়।
আমার বাসার কুকুর দুইটা একা একাই বাইরে যায় আর নির্মম নিপীড়নের চিহ্ন নিয়ে বাসায় ফিরে। লাঠির বাড়ি, গরম পানি, ঢিলের আঘাত এইসবের যন্ত্রণা নিয়ে বাসায় ফিরে। ঈদের দুই দিন পরে বাসা থেকে বের হচ্ছি এমন সময় আমার একটা কুকুর চোখে যন্ত্রণা নিয়ে কুই কুই করে কাঁদতে কাঁদতে আমার পায়ে মাথা ঘষতে শুরু করলো। ভালো করে খেয়াল করে দেখি মাথা রক্তাক্ত। ঠিক যেন মানুষের মতো বলতে চাইছে, দেখ আমাকে কীভাবে মেরেছে।
বাসা থেকে বের হলেই রাস্তার কুকুরগুলো ছেঁকে ধরে। কীভাবে যেন গন্ধ পায়। আমি বাসার সামনের দোকান থেকে রুটি নিয়ে খাওয়াই। রুগ্ন, অপুষ্ট কুকুরগুলোর প্রত্যেকের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন। কারো পা ভাঙা, কারো মেরুদণ্ডে আঘাত, কারো চামড়ায় স্পষ্ট কাটা দাগ। কোনটাই পাগলা কুকুর না। খুব স্বাভাবিক এবং শান্ত কুকুর। তাহলে কার বাপের ধন এই কুকুরগুলো খেয়েছিল যে এভাবে কুকুরগুলোকে মারতে হবে?
অনেককে দেখি হাতে ঢিল নিয়ে গলিতে হাটতে, কুকুর দেখলেই মারবে। কুকুর অপরিচিত মানুষ দেখলে ঘেউ ঘেউ করে। এই ঘেউ ঘেউয়ে সম্ভবত আমাদের বীর বাঙালীর আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে যায়। এতোই বীরপুঙ্গব। কাপুরুষেরা নির্মম হয়, এই নির্মমতা আসে ভয় থেকে। তাই আমরা যেটাকে পছন্দ নয় তাকে নির্মুল করে দিয়ে শান্তি পেতে চাই।
আপনি কুকুর পছন্দ করেন না, ভালো কথা। কিন্তু আপনি কেন আপনার অপছন্দ আপনার ঘৃণা অন্যের উপরে চাপিয়ে দেন?
সৃষ্টিকর্তা খালি আপনারেই মমতা দিয়া সৃষ্টি করছে নাকি? আপনি একাই তার বান্দা? আর সব প্রাণী, পাখ পাখালি, কীট পতঙ্গ সব বানের পানিতে ভাইস্যা আসছে? আপনারে তো সৃষ্টিকর্তার তরফে সবাইরে দেখভাল কইর্যা রাখার জন্য পৃথিবীতে পাঠানো হইছে। আর আপনি আজ এরে মারতেছেন, ওরে ল্যাংড়া করতেছেন, তারে রক্তাক্ত করতেছেন? কেন ভাইজান? আপনার সমস্যাটা কী?
সৃষ্টিকর্তার অপরুপ সৃষ্টি প্রাণ আর প্রকৃতির উপরে অমানুষিক ঘৃণার এই মনুষ্য জীবন নিয়া আপনি আসলে কী করতে চান? কোথায় যাইতে চান?
One thought on “আমাদের প্রাণ ও প্রকৃতি ঘৃণা”
Splendid.