প্রশ্ন শুনে চমকে যাবেন না। প্রশ্নটা আমার নয়; আমার এক বন্ধুর। তিনি বাংলাদেশের একজন নামকরা সিনেমা পরিচালক। তিনি এসেছিলেন তার নতুন সিনেমার প্লট নিয়ে আমার সাথে একটু আলোচনা করতে। আলোচনার শুরুতেই তিনি আমার দিকে এই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন।

বিহ্বলতা কাটার পরে আমি উনাকে বললাম। আপনার এই প্রশ্নটাই ফাণ্ডামেন্টালি রং।

কেন? তিনি ভ্রু কুচকে জানতে চাইলেন।

আমি বললাম, আমাদের যেটা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগত, মানে চোখ, কান, স্বাদ, গন্ধ, স্পর্শ দিয়ে যেই জগতকে প্রত্যক্ষ করি সেই জগতে আমরা “আছে” বা “নাই” বিচার করি ইন্দ্রিয় বা বর্ধিত ইন্দ্রিয় (যেমন টেলিস্কোপ ইত্যাদি) দিয়ে যদি কিছুকে শনাক্ত করতে পারি অথবা না পারি তাহলে। তাই “আছে” বা “নাই” এটা একান্তভাবেই এই ফিজিক্যাল দুনিয়ার বা এই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের টার্ম।

“আত্মা” একটা অতীন্দ্রিয় বিষয়, এটা আপনি আগেই স্বীকার করে নিয়েছেন। তার মানে “আত্মা” ইন্দ্রিয়ের বাইরের জগতের বিষয়। সেই “ইন্দ্রিয়ের বাইরের” জগতে “ইন্দ্রিয়ের জগতের” কোন নিয়ম খাটবে না, খাটার কথা নয়। তবুও অতীন্দ্রিয় জগতের একটা বিষয়কে আপনি কেন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের টার্ম “আছে” বা “নাই” দিয়ে প্রশ্ন তুলছেন? আপনাদের বিজ্ঞানমনস্কদের নিয়ে এটা একটা মারাত্মক সমস্যা। সব কিছু বিজ্ঞানের ল্যাবরেটরিতে ঢুকিয়ে পরীক্ষা করতে চান।

ঠিক এভাবেই নাস্তিকেরা প্রশ্ন তোলে ঈশ্বর কি আছে? আরে বাবা, ঈশ্বর কি এই জাগতিক জগতের কোন বস্তু? যে সেটা “আছে” বা “নাই” নির্ধারন করবে ইন্দ্রিয়?

বুদ্ধি ও বিচারের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই অভিজ্ঞতা জ্ঞানের বা বিজ্ঞানের যাই বলিনা কেন; তার রূপ ধারণ করে। বিজ্ঞান দিয়ে আমরা ওয়ার্কিং ট্রুথ বা কনজেকচার তৈরি করি সম্ভাবনার সীমায় বেধে। খেয়াল রাখবেন জ্ঞানের বা বিজ্ঞানের কাজ “সত্য” নির্নয় নয়। জর্মন দার্শনিক ইম্মেনুয়েল কান্ট জ্ঞানের এই স্তরের পরেও আরেকটি স্তরের কথা বলেছেন; সেটা “প্রজ্ঞা”। জ্ঞানের স্তরে যুক্তি বা বিচারের স্ববিরোধিতা থেকেই যায়, বিজ্ঞান তার সীমানা জানে, তাই সে সম্ভাবনার বা প্রোবাবিলিটি উল্লেখ না করে কনজেকচার ঘোষনা করেনা। কিন্তু বিজ্ঞান মনস্করা সেই সিমানা মানে না। আপনার হয়েছে সেই দশা, আপনি প্রশ্ন করেছেন প্রশ্নের সীমানা ছাড়িয়ে। প্রজ্ঞার স্তরে আমরা বুদ্ধি বা মানুষের বিচার শক্তির সীমা ও স্ববিরোধিতা সম্পর্কে সচেতন ও সজ্ঞান হয়ে উঠি।

আপনার প্রশ্নটা হয়তো “জ্ঞানের প্রশ্ন” তাই এটা স্ববিরোধী, “প্রজ্ঞার প্রশ্ন” এমন হয়না। তখন হয়তো আপনি জিজ্ঞেস করতেন, “আত্মা” সম্পর্কে আপনার মত কী? সেটার উত্তর দেয়া সহজ। আমার কোন মত না থাকলেও “আত্মা” সম্পর্কে পৃথিবীতে যা যা মত আছে সেটার বর্ননা সম্ভব। কিন্তু আত্মা আছে কি নাই এটার উত্তর সম্ভব নয়।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter