রবিনসন ক্রুসো উপন্যাসটা কেন লেখা হয়েছিলো?

রবিনসন ক্রুসো উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৭১৯ সালে। যেখানে দেখানো হয়একজন একাকী মানুষ একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপে কীভাবে বেচে থাকে। এই উপন্যাসটা মডার্নিজমের একটা পলিটিক্যাল প্রজেক্ট। সেই সময়ের যে সময়ে মডার্নিজম আসছে, ব্যক্তি মানুষের জয়গান গাওয়া শুরু হয়েছে; সামাজিক মানুষ থেকে ব্যক্তি মানুষের উদ্ভব হচ্ছে।

মানুষ একটি সামাজিক এন্টিটি, অসংখ্য মানুষের সাথে বিনিময়ের সম্পর্কে সম্পর্কিত না থাকতে পারলে তার অস্তিত্বই অসম্ভব। আবার ব্যক্তিকে আলাদা এন্টিটি না করলে মডার্নিজম দাড়াতে পারেনা। তাই মডার্নিজমের দেখানোর প্রয়োজন হয়েছিল এমন এক সত্তার যা কোন সামাজিক বিনিময়ের মধ্যে না থেকেও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে। জন্ম নিল রবিনসন ক্রুসো। এই ক্রুসোই মডার্ন মানুষ যে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য আর ব্যক্তিবাদের বর্ম পরে ঘুরে বেড়ায়, আর তার ব্যক্তিতন্ত্রের নিজস্ব দ্বীপ তৈরি করে। সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে একক ব্যক্তির দ্বীপের ডিলিউশন তৈরি করে জীবন যাপন করাকেই সে মুক্তি বলে ধরে নেয়।

সমাজ আর প্রকৃতির সাথে মানুষের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ককে রুশো মনে করেছিলেন শৃংখল। সেই মনে করা শৃংখল ছিড়েই জন্ম নিল ব্যক্তি মানুষ, স্বার্থপর মানুষ। এরপরে যা হল তা ইতিহাস, সেই ব্যক্তি মানুষ তার স্বার্থের শৃংখলে বেধে ফেললো অন্য মানুষ আর প্রকৃতিকে। ধংস করে দিল সমাজ নামের মানুষের অনন্য প্রতিষ্ঠানকে। ধংস করলো প্রকৃতিও। সে বুঝতেও পারলো না সমস্যাটা সে কোথায় তৈরি করেছে। সে নিজেই নিজেকে ধংস করছে। সে তো আর কিছুরই অংশ নয়। সেতো ভোগী মানুষ, সেতো বিচ্ছিন্ন মানুষ, তার তো আর কাউকে দরকার নেই বেচে থাকার জন্য, না মানুষকে দরকার, না প্রকৃতিকে দরকার।

আজকের লড়াই তাই আবারো সমাজের অভিমুখে মানুষের ফেরার লড়াই। অন্য মানুষের সাথে প্রকৃতির সাথে সমাজের মাধ্যমে সচেতন সম্পর্ক স্থাপনের লড়াই। তাহলেই মানুষের মুক্তি নয় মোক্ষ, যাকে ইংরেজিতে বলে স্যালভেশন। আর মুক্তি নামের নতুন শৃংখল নয়।

 

Share

One thought on “রবিনসন ক্রুসো উপন্যাসটা কেন লেখা হয়েছিলো?

  1. এক কথায় অসাধারান, যা আগে এভাবে চিন্তা করা হয়নি। সুযোগ ও ছিল না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter