কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের হিন্দু মুসলিম বিরোধের প্রশ্নে আমি ব্রুনো বাউয়ারের লেখা ইহুদি প্রশ্নের প্রসঙ্গ তুলেছিলেম। সেখানে ব্রুনো বাউয়ারের আরগিউমেন্টের নাম গুলো একটু অদল বদল করে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে হাজির করেছিলাম। এবং জানতে চেয়েছিলাম ব্রুনো বাউয়ার এই প্রসঙ্গে সমাধানের পথ কী বাতলেছিলেন। ব্রুনো বাউয়ার ধর্মীয় বিরোধিতার জায়গাটিকেই তিনি খ্রিষ্টান ও ইহুদির মধ্যে বিরোধের সবচেয়ে অনড় অমীমাংসিত জায়গা বলে শনাক্ত করেছেন। ঠিক যেমন সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সঙ্গে সংখ্যালঘু হিন্দুর বিরোধটাই অসাম্প্রদায়িক বা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির প্রধান ক্ষেত্র প্রধান ক্ষেত্র বলে বাংলাদেশর স্যেকুলারদের প্রায় সকলেই শনাক্ত করে। এই বিরোধী মীমাংসার উপায় কি? ব্রুনো বাউয়ার বলেন; একটাই উপায়। এমন একটি অবস্থা তৈরী করা যাতে খোদ বিরোধটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। কী করে ধর্মীয় বিরোধিতা অসম্ভব করে তোলা যায়? সেটা সম্ভব যদি ধর্মকেই অসম্ভব করে তোলা যায়। অর্থ্যাৎ যদি খোদ ধর্মেরই বিলুপ্তি ঘটানো যায়।
বাউয়েরের যুক্তি অনুসারে ধর্মীয় বিরোধিতা অবসানের একমাত্র পথ হচ্ছে ধর্মের বিলুপ্তি। যখন সকল ধর্মাবলম্বীরা মনে করবে যে এটা হচ্ছে মানুষেরই বিকাশমান চৈত্যন্যের বিভিন্ন পর্ব মাত্র, নানাবিধ স্তর ও অভিপ্রকাশ—তখন পরস্পরের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিরোধিতারও অবসান ঘটবে। সাপ যেমন করে তার জীবনের একটা স্তরে এসে তার চামড়া পরিত্যাগ করে, তেমনি ধর্মের শুকনা খোসা ফেলে দিয়ে বেরিয়ে আসবে সত্যিকারের মানুষ। ধর্মহীন, ধর্ম থেকে মুক্ত, ধর্মকে সাপের খোসার মতো ফেলে দিয়ে আসা মানুষ। তখন আর কেউ খ্রিষ্টান, ইহুদি, হিন্দু। বৌদ্ধ বা মুসলমান নয়। তারা শুধু মানুষ। অতএব এই বিকশিত স্তরে মানুষের সঙ্গে মানুষের কোনো ধর্মীয় বিরোধিতা থাকবে না। যদি কোনো বিরোধিতা থাকে সেটা হবে একান্তই বিচার মূলক, পর্যালোচনায় সমৃদ্ধ বা অন্য কথায় বৈজ্ঞানিক সম্পর্ক। বিজ্ঞান বা সচেতন জ্ঞানই হবে তখন তাদের সম্পর্কের ভিত্তি। ধর্মীয় বিরোধিতা মীমাংসা ধর্মের মধ্যে থেকে সম্ভব নয়। কিন্তু বৈজ্ঞানিক বিরোধিতার মীমাংসা বিজ্ঞানের মধ্যেই সম্ভব।
এবার দেখুন বাংলাদেশের স্যেকুলার ও নাস্তিকেরা কি এটাই চায়না? কার্ল মার্ক্স কি তাই চেয়েছিলেন? একদম না। তিনি ব্রুনো বাউয়ারের ধর্মহীন মানুষের এই সমাধান মানেন নি। বিষয়টা খুব অবাক করার মতো তাই না? বাংলাদেশের বামপন্থিরাও আসলে এই ক্ষেত্রে ব্রুনো বাউয়ার পন্থী। কোনভাবেই মার্ক্স পন্থী নন।
অথচ দেখেন স্যেকুলার পন্থিরা গত দিনেই এই প্রসঙ্গে আমার লেখায় ব্রুনো বাউয়ারের গুষ্টি উদ্ধার করলো সেদিন। এদের লেখাপড়া যে লবডঙ্কা সেটার প্রমাণ তারা সবসময় দেয়।
মার্ক্স কী বলেছিলেন ব্রুনো বাউয়ারের সমালোচনায় সেই আলাপ আরেকদিন হবে।
লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন