কিছুদিন আগে এক বন্ধুর বাসায় অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়ে গেলাম। তখন সারা দেশের হট টপিক হচ্ছে কাশেম বিন আবু বাকার। খুব স্বাভাবিক তখন সেই বন্ধুর বাসায় আলাপ চলছিলো কাশেম সাহেবকে নিয়েই। আমি বলছিলাম কাশেম সাহেব পুরোদস্তর মডার্নিস্ট। এই আলাপটা এগুচ্ছে তখন হুট করে একজন এসে বলে বসলো আর আপনি হচ্ছেন মৌলবাদী। লোকটাকে আমি চিনতাম না, আজকে হঠাৎ তার লেখা আমার নিউজফিডে আসলো। দেখলাম, আরে এই লোক তো সেই লোকটা। তার পরিচয় ও দেখলাম, আমার সেই বন্ধুর প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করেন।
তার চেহারাটা নিউজফিডে দেখে আমাকে দেয়া সেই মৌলবাদী অভিধার কথা মনে হতেই হাসি পেলো।
তিনি না জানতেই পারেন “মৌলবাদ” এই তত্ত্বটাই একটা আমেরিকান তত্ত্ব। এর উদ্ভব ও বিকাশ আমেরিকান সমাজেই। এমনকি আমেরিকা রাষ্ট্র গঠনেও মৌলবাদের ভুমিকা আছে বলে একাডেমিশিয়ানদের অনেকেই মনে করেন।
মৌলবাদ শব্দটা কীভাবে এলো?
এই শব্দটার জন্ম দেয় আমেরিকার মুডি বাইবেল ইন্সটিটিউট এবং তার ভাবাদর্শের অনুসারী নায়াগ্রা বাইবেল কনফারেন্স। মুডি বাইবেল ইন্সটিটিউটের মুল কথা ছিল বাইবেলকে অভ্রান্ত ধরে নিতে হবে, তার কোন কিছু নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা যাবেনা। পরবর্তিতে ১৮৯৫ সালে নায়াগ্রা বাইবেল কনফারেন্স বাইবেলের পাচটি মুল সুত্রকে খ্রিস্টান ধর্ম বিশ্বাসের ফান্ডামেন্টাল বলে ঘোষণা করে। এগুলো হচ্ছে।
১/ বাইবেল অভ্রান্ত
২/ খ্রিস্ট দিব্যরূপে পুজ্য।
৩/ মাতা মেরির কৌমার্য ধ্রুব সত্য
৪/ খ্রিস্ট্রের অপসরণ বিকল্পমুলক
৫/ খ্রিস্ট্রের সশরীর পুনরার্বিভাব আসন্ন
এই পাচটি মুল সুত্রকে ব্যাখ্যা করে ১৯০৯ সালে ডিকশন ও টোরের সম্পাদনায় বারো খণ্ডের বই প্রকাশিত হয়, নাম; দ্য ফাণ্ডামেন্টালস: এ টেস্টিমনি টু দ্য ট্রুথ। এর পর থেকেই এই নতুন ধারার খ্রিস্টবাদীদের ফাণ্ডামেন্টালিস্ট এবং তাদের মতবাদকে ফাণ্ডামেন্টালিজম বলা হয়।
এই ডিকশন ও টোরেই পরে ঘোষণা করেন, আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতাদের ধর্মীয় আদর্শই আমেরিকার ভাবাদর্শ। তারা বললেন, America was founded by men of faith on Godly principles. এই গডলি প্রিন্সিপল বা ঐশ্বরিক নীতিই হচ্ছে সেই পাচটা মৌল আদর্শ যা দ্য ফাণ্ডামেন্টাল গ্রন্থে বলা হয়েছে।
আমেরিকান ভ্যালুজ বা আমেরিকান ওয়ে অব লাইফ বলতে যা বুঝায় তা আসলে পুঁজিবাদ বা ক্যাপিটালিজমের কালচারাল ফর্ম বা সাংস্কৃতিক রুপ, আর তা হচ্ছে প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানিজম আর কিছুই না। মার্কিন ধনতন্ত্র আর খিস্ট্র ধর্ম পরস্পরের হাত ধরে চলে। এই ক্যাপিটালিজমের টিকি বাধা আছে ওই পাঁচটা ফাণ্ডামেন্টালে। তাই আমেরিকান জীবন ও মুল্যবোধ মৌলবাদী বটেই।