এটা বলে নেয়া ভালো, বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের অনেক খামতি আছে। আর একালে এসে এটা ব্যবহারিক দিক থেকে ফ্যাসিষ্ট ও মাফিয়া রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে। আর চলতি সরকারের নেতাদের ভাষ্য অনুসারে তাঁরা নাকি এক সেকুলার রাষ্ট্র তারা কায়েম করেছে। যদিও সেটা আসলে বাস্তবে হয়েছে এক ইসলাম-বিদ্বেষী এবং ভারতের স্বার্থে পরিচালিত রাষ্ট্র। এবং এই সবই হয়েছে বাঙালী জাতীয়তাবাদের রাষ্ট্র – এই দানবের নামে।
বাংলাদেশের হিন্দু-রাজনীতি এই বাঙালী জাতীয়তাবাদী দানব ক্ষমতার অংশ। সে অর্থে বাংলাদেশে হিন্দুদের স্বার্থ তারা যে রাজনীতি দিয়ে পরিচালিত করছে সেটাই আসলে এখন ক্ষমতায় আছে বা ক্ষমতাসীনদের অংশ। এবং বলা বাহুল্য এসব কারণে সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের হিন্দুদেরকে সংখ্যালঘু হিসাবে মনে হলেও তাদের রাজনীতিই এখন ক্ষমতাসীন। বাঙালি জাতিবাদী রাজনীতির ধারায় যে হিন্দুদের স্টেইক আছে স্যেকুলারিজমের নামে তাই এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ভোগ করছে। হিন্দুরা সংখ্যায় যাই হোক তাঁরা ক্ষমতার অংশ। আপনি মানুন বা না মানুন।
আবার মজার কথা হল, বাংলাদেশের হিন্দুনেতারা সরকারকে ডিঙ্গায়ে আলাদা করে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি দলের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলায় এক নতুন রাজনীতির ধারাও তৈরি করেছে। সেটা এমনকি সময়ে সময়ে হাসিনা সরকারকেই হুমকি দিয়েছে। এরা নিজেদের কতটা শক্তিশালী মনে করে তা বুঝা যায় যখন আমরা দেখি এরা সরকারের আয়ু সপ্তাহ দিয়ে মেপে কথা বলছে। এই ফেনোমেনন গুলো আসলে ক্ষমতাসীনদেরই অংশ তবে তা আভ্যন্তরীণ মুল স্রোতের পাশে কিছু সমান্তরাল স্রোত। এই সমান্তরাল স্রোত তাদের বক্তব্যে তাদের শত্রু হিসাবে ঠাউরায় বাংলাদেশের সামগ্র মুসলমান সম্প্রদায়কে। যদিও ক্ষমতায় হাল ধরে আছে তাদেরই আরেক রাজনৈতিক প্রকাশ বাঙালী জাতীয়তাবাদের ধারক আওয়ামী লীগ। এই সমান্তরাল স্রোতগুলোর দ্বন্দ্ব নানা সময় প্রকাশিত হবেই।
ক্ষমতশীনদের এই আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আমরা প্রকাশিত হতে দেখি নানা সময়। সাম্প্রতিক কালে আমরা এই দ্বন্দ্ব প্রকাশিত হতে দেখেছি সাবেক বিচারপতি সিনহা কাণ্ডে।
বাংলাদেশের “হিন্দু প্রশ্নের” রাজনৈতিক ফয়সালা একটা অতি জটিল ও ডেলিকেইট বিষয়। বিপুল রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, ইতিহাসবোধ আর মাঠের বাস্তব অভিজ্ঞতা ছাড়া এই প্রশ্নের ফয়সালার সাধ্য কারো হবেনা। তবে এটা স্পষ্ট এই প্রশ্নের ফয়সালার সামর্থ্য বাংলাদেশের স্যেকুলার বা প্রগতিশীল বলে যারা পরিচিত তাঁদের নেই। কারণ তাঁরা এটা বিগত ৫০-৬০ বছরে এটা করতে পারেনি, বরং পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে।
তবে আগামীর বাংলাদেশ এই প্রশ্নের ফয়সালা করবে। আগামীর রাজনীতিতে যারা পথ দেখাবে তাঁদের সেই সামর্থ্য আছে, যদি তাঁদের কথা আন্তরিকভাবে হিন্দু সম্প্রদায় শোনে এবং এতোদিনের বানানো তাঁদের “সাম্প্রদায়িকতার” বয়ান থেকে তাঁরা বেরিয়ে আসে, পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির খপ্পর থেকে বেরিয়ে এসে তাঁদের ঐতিহাসিক ভুলগুলোর দিকে দৃষ্টি দেবার হিম্মত অর্জন করতে পারে, তাহলেই ফয়সালা হবে।
আমি আশাবাদী এই প্রশ্নের ফয়সালা হবেই। আমাদের সময়েই হবে।
লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন