ভগবানের সহিত কথোপকথন: ৯

এই উজ্জ্বল, মসৃণ চৌকাকার বস্তুটি কী?

আগাইয়া দেয়া ‘আই প্যাড’ দেখিয়া ভগবান ভ্রু-কুঞ্চিত করিয়া প্রশ্ন করিলেন।

প্রভু, ইহা আই প্যাড। আপনার প্রাগৈতিহাসিক অর্চনা উপাচারে তো ঘৃত, ধূম্র, ফলাদি আর অগ্নিজল ছাড়া আর কিছুর সুপারিশ করেন নাই, তাই আর কিছুর খোঁজ-খবর পাইবেন কীভাবে? আমাকে ধর্ম প্রচারের দায়িত্ব দিতেন, দেখিতেন আজিকে স্বর্গলোকে টিভি, ডিস, কম্পিউটার সবই থাকিত।

তুই ধর্ম প্রচার করিবি?

হ্যাঁ প্রভু, নতুন পদ্ধতিতে। শুধু আপনার সাহায্য দরকার।

কী সাহায্য।

আই প্যাডে ফেসবুক অ্যাপ্লিকেশন খুলিয়া ভগবানকে দেখাইতে থাকিলাম।

ইহা ফেসবুক। আপনার ভক্তকুল প্রার্থনা স্থলের চাইতে এই স্থানেই বেশি সময়ক্ষেপণ করিয়া থাকে। তাই ধর্মের প্রচার চলিবে ফেসবুকে।

কীভাবে?

আপনার একটি ফেসবুক আকাউন্ট খুলিয়াছি, আর আপনাকে আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড হিসাবে অ্যাড করিয়াছি।

ইহাতে কী হইবে?

আপনাকে ট্যাগ করিয়া আমি এখন নোট লিখিতে থাকিব। আপনি শুধু লাইক মারিবেন।

তুই ছাই-পাশ যাহা লিখিবি তাহাতেই আমি লাইক মারিব?

প্রভু, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। আপনার ধর্মগ্রন্থের বাহিরে কিছুই লিখিব না। বিশ্বাস করুন।

শুনি কী লিখিবি?

লিখিব, এই পৃথিবী তুচ্ছ, সকলি মায়া, অনন্ত শান্তি আছে স্বর্গলোকে, সেই স্বর্গলোকে প্রবেশ করিতে হইলে সত্য জ্ঞান অর্জন করিতে হইবে। এই সত্য জ্ঞান আছে আপনার কাছে, তাই খামোখা ইহলোকে জ্ঞান চর্চা না করিয়া ধ্যানস্থ হইয়া আপনার নৈকট্য অর্জন করিয়া সত্য জ্ঞানের আলোকপ্রাপ্ত হইতে হইবে।

আহা, আহা। তোর প্রতিভায় আমি মুগ্ধ।

প্রভু, “প” আদ্যক্ষরযুক্ত তিনটি বিষয় চাপাইয়া রাখা যায় না, ইহার মধ্যে প্রথমটি প্রতিভা।

আর কী বলিবি?

প্রভু, আপনাকে প্রীত করিবার আরো কয়েকটি শর্টকাটের কথা বলিব।

যেমন?

যেমন বলিব, ধর্মদ্রোহীদের কোতল করিতে, বিধর্মীদের উপাসনালয় ভাঙ্গিয়া ফেলিতে, বিধর্মীদের সম্পদ লুট করিতে, উহাদের স্ত্রী-কন্যাদিগকে শয্যাসঙ্গী করিতে। মানে, আপনার অনুসারী দাবি করা কিছু কিছু মানুষের দৃষ্ট কর্মকাণ্ড আর কি, তবে আরো কিছু লিখিতে হইলে আমাকে কানে কানে বলিয়া দিয়েন প্রভু।

ভগবান খুক্ খুক্ করিয়া কাশিয়া উঠিলেন। প্রসঙ্গ পাল্টাইবার জন্য বলিয়া উঠিলেন।

ইহা অতি উত্তম ব্যবস্থা। তবে ফেসবুকে আমিও কিছু লিখিব। ভগবান ডগমগ হইয়া বলিলেন।

খবরদার, ভ্রমেও ওই পথে পা বাড়াইবেন না। এর মধ্যেই ভুলভাল যা লিখিয়াছেন, তাহার মীমাংসা করিতেই আপনার ভক্তকুলের কালঘাম ছুটিয়া যাইতেছে। চন্দ্রকে বলিয়াছেন নক্ষত্র, সর্বোচ্চ পর্বতের নাম বলিয়াছেন মেরু পর্বত, পৃথিবীকে বলিয়াছেন মহাবিশ্বের কেন্দ্র, ভুলের কোন শেষ নাই।

তোর তো দেখিতেছি আমার জন্য চিন্তারও শেষ নাই।

প্রভু, “প” আদ্যক্ষরযুক্ত তিনটি বিষয় চাপাইয়া রাখা যায় না, ইহার মধ্যে দ্বিতীয়টি হইতেছে প্রেম। তাই চিন্তা তো হইবেই।

এই আই প্যাড কীভাবে চালাইতে হয়? দেখাইয়া দে।

প্রভু, আমার এখন যাইতে হইবে। চোখ-মুখ বিকৃত করিয়া বলিলাম।

কেন? ভগবান বিস্মিত হইলেন।

প্রভু, “প” আদ্যক্ষরযুক্ত তিনটি বিষয় চাপাইয়া রাখা যায় না, ইহার মধ্যে তৃতীয়টি হইতেছে পায়খানা, আর চাপাইয়া রাখিতে পারিতেছিনা প্রভু।

ভগবানের সহিত কথোপকথন ১

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter