বিজ্ঞানের দর্শন ২

পশ্চিমে কিছুদিন আগে পর্যন্ত ও বিজ্ঞানকে দেখা হতো বাস্তবতা আর প্রকৃতি সম্পর্কে নৈর্ব্যক্তিক জ্ঞানের এক অনুসন্ধান হিসেবে। বিজ্ঞানীদের মনে হতো যেন সেই ধর্মীয় মহামানব যারা সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ছুড়ে ফেলে সত্যের সন্ধান করছে। ২০০০ সালে প্রকাশিত একটা গবেষণা সবার মাথা নষ্ট করে দিল। গবেষণাটি Science and the Public A Review of Science Communication and Public Attitudes to Science in Britain এই শিরোনামে প্রকাশিত হয়। ফলাফলে দেখা গেল মানুষ বিজ্ঞানীদের একেবারেই বিশ্বাস করেনা। বিজ্ঞানের একটা ক্ষতিকর দিক আছে সেটা মানুষ বেশ আগে থেকেই অনুভব করছিল। এই গবেষণা প্রকাশিত হবার বিশ বছর আগেই আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমরা রচনা লিখতাম, “বিজ্ঞান আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?” এর অর্থ গণ মানসে বিজ্ঞান সম্পর্কে একটা বিতর্ক দানা বাদ্যে শুরু করেছে অনেক আগে থেকেই। সাহিত্য, সিনেমায় বিজ্ঞানের চরিত্রগুলো নেতিবাচকভাবে উপস্থাপিত হতে শুরু হলো, ফ্র্যাঙ্কেন্সটাইন, ডা জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড, এমনকি মাসুদ রানার ভিলেইন বিজ্ঞানী কবীর চৌধুরী, ব্যাটম্যান এন্ড রবিনের দুই ভিলেইন চরিত্রই বিজ্ঞানী। এই নেতিবাচক উপস্থাপন এমনি এমনি হয়নি। বিজ্ঞানীরা আসলে বিজ্ঞান নিয়ে যা যা গবেষণা করে তার ভিতরে দুই একটা উদাহরণ দিলেই বুঝা যাবে, এরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্মম, হৃদয়হীন। পারমানবিক বোমা বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে নাজি বিজ্ঞানের কথা বাদ দেই, আমরা সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা থেকে তিনটা উদাহরণ দেই।

১/ ইংল্যেন্ডের পোর্টন ডাউন বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানে ১৯৯৫ সালে গবেষণা হচ্ছে উচ্চগতির মিসাইল মগজের কেমন ক্ষতি করে। শত শত শুকর এবং বাদরকে শুন্যে ঝুলিয়ে দুই চোখের মাঝখানে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করা হতো।

২/ টাইম ম্যাগাজিন ১৯৯৪ সালে রিপোর্ট করছে আমেরিকায় টিন এজের বাচ্চাদের রেডিওএক্টিভ খাবার খাওয়ানো হয়েছে বছরের পর বছর তাঁদের উপর রেডিওএক্টিভিটি কেমন প্রভাব ফেলে সেটা দেখার জন্য, মধ্যবয়সী মায়েদের রেডিওএক্টিভ প্লুটোনিয়াম ইঞ্জেকশন দেয়া হয়েছে, বন্দীদের অণ্ডকোষে রেডিয়েশন দেয়া হয়েছে। এই গবেষণা চলেছে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত।

৩/ ১৯৯৫ এ নিউ ইওর্ক টাইমস হার্ভার্ডের একটি স্টাডি নিয়ে রিপোর্ট করে যেখানে ১৯৫০-১৯৭০ পর্যন্ত হার্ভার্ডে ভর্তি হওয়া সব ছাত্র ছাত্রির উলঙ্গ হয়ে কয়েকটি ছবি তুলতে হত একটা মেগা রিসার্চ প্রজেক্টের অংশ হিসেবে। শরীরের ছবি এনালাইসিস করে মানুষের বুদ্ধিমত্তা মাপার পদ্ধতি আবিস্কারের জন্য এই গবেষণাটা চালানো হয়। উদ্দেশ্য ছিল যেন ইনফিরিওর রেইস আইডেন্টিফাই করা যায় এবং ভবিষ্যতে আরো উন্নত প্রজাতির প্রজন্ম পৃথিবীতে উপহার দেয়া যায়। পরিকল্পনা ছিল ইনফিরিওর রেইসের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে দিয়ে এই উদ্দেশ্য হাসিল করা হবে। এই ছবিগুলো দিয়েই ATLAS OF MEN প্রকাশ করা হয়। এই নগ্ন ছবির মধ্যে একজন ভবিষ্যৎ অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্টের স্ত্রীও ছিলেন।

জ্বি ভাই এটা নাজি জার্মানি নয় লিবারেল আমেরিকার হার্ভার্ড। সেখানে ইনফিরিওর রেইস আর সুপিরিরর রেইসের গবেষণা হয় বেশীদিন আগের কথা নয় ১৯৭০।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter