প্রকৃতির উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণের কথা কি মার্ক্স বলেছিলেন?

এক ফেইসবুকার বিখ্যাত হওয়ার বাসনায় দাবী করেছেন, প্রকৃতির উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নাকি মার্ক্সবাদের মৌলিক বিষয় মার্ক্সবাদ কী বলে জানিনা, তবে কার্ল মার্ক্স এই কথা কখনো বলেননি। মার্ক্স যেটা বলেননি সেটা মার্ক্সের মুখে ঠেসে দিয়ে নিজের মতলব হাসিল করার চেষ্টা বেশ কৌতুকপ্রদ। নিউ এজ অব সাইন্সে ফ্রান্সিস বেকন প্রথমে প্রকৃতির উপর প্রভুত্বের ধারণা আনেন। তিনি Novum Organon, লেখেন: “Let the human race recover that right over nature which belongs to it by divine bequest.”

মনুষ্য প্রজাতি প্রকৃতির উপর তাঁর অধিকার প্রতিষ্ঠা করুক যা স্বর্গীয় ভাবে তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব

এই অর্পিত দায়িত্বের কথা বেকন বলেছিলেন জুডো খ্রিস্টিয়ান থিওলজি থেকে যেখানে আদম তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব অনুসারে গার্ডেন অব এডেনকে সাজিয়েছিল। বিখ্যাত ফরাসি উদ্যানবিদ Andrè Le Notre এই দার্শনিক তত্ত্বের উপর দাড়িয়ে নিখুত বাগানের পরিকল্পনা করেন। গড়ে উঠতে থাকে জ্যামিতিক ফর্মের বাগান, যেখানে মাঝে মাঝে থাকে মানুষ ও প্রাণীর গড়নে কাটা গাছ। এটাই সেই স্বর্গোদ্যান যেখান থেকে মানুষ তাঁর আদিপাপের দায়ে বহিষ্কৃত হয়েছিল। খিস্ট্র ধর্ম অনুসারে আদমকে গার্ডেন অব এডেনকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এখানেই আছে সেই মনস্তত্ত্ব যা বলে স্রষ্টার সৃষ্টি নিখুত নয়, মানুষই সেটাকে নিখুঁত করে তোলে। শুরু হয় প্রকৃতির সহজ প্রকাশকে বদলে দেয়ার চেষ্টা। এই আধুনিক বাগানও হাড়ে মজ্জায় খিস্ট্র তন্ত্র।

জ্যামিতিক বাগান যার হাড় আর মজ্জায় আছে খ্রিষ্ট্রতন্ত্র

মার্ক্স বেকনের এই অবস্থানের সমালোচনা করেছিলেন। তিনি Grundrisse তে বেকনের সমালোচনায় লিখেছিলেন ([1620] 1994, pp. 29, 43) “nature is only overcome by obeying her” প্রকৃতির অনুবর্তী হয়েই প্রকৃতিকে বশে আনা যায়। মার্ক্স পুঁজিবাদের আবিস্কার প্রকৃতির স্বশাসিত আইনের সমালোচনায় যা বেকনের প্রকৃতিকে পরাজিত করার তত্ত্বের উপরে দাড়িয়ে লিখেছিলেন। (nature’s) “autonomous laws appears merely as a ruse so as to subjugate it under human needs, whether as an object of consumption or a means of production” (1973, pp. 409–10).

প্রকৃতির স্বশাসিত আইন নিছক একটা ছলাকলা ঠিক তেমনি মানুষের প্রয়োজনে প্রকৃতিকে বশীভূত করার ধারণাও; সেটা ভোগ বা উৎপাদনের বিষয় যেটাই হোক না কেন।

এঙ্গেলস তাঁর The Dialectics of Nature ([1874–80] 1940, pp. 291–92), একই কথার প্রতিধ্বনি করেছেন। তিনি বলেছেন

“Let us not, however, flatter ourselves overmuch on account of our human conquest of nature. For each such conquest takes revenge on us. . . . At every step we are reminded that we by no means rule over nature like a conqueror over a foreign people, like someone standing outside nature—but that we, with flesh, blood, and brain, belong to nature, and exist in its midst, and that all our mastery of it consists in the fact that we have the advantage of all other beings of being able to know and correctly apply its laws.”

আমরা যেন প্রকৃতির উপর মানুষের বিজয়গুলির জন্য বেশী আত্মতুষ্ট না হই। কারণ এইরকম প্রতিটি বিজয়ের জন্যই প্রকৃতি আমাদের উপর বদলা নেয়………………… এইভাবেই প্রতিপদে আমাদের মনে করিয়ে দেয়া হয় যে আমরা বিজয়ির মতো বা প্রকৃতির বাইরে অবস্থিত কারো মত প্রকৃতির উপর প্রভুত্ব করিনা।কিন্তু কথাটা এই যে আমরা আমাদের মাংস, রক্ত মস্তিস্কসহ প্রকৃতিরই অন্তর্ভুক্ত, এবং তার মধ্যেই আমরা বিদ্যমান এবং এর উপরে আমাদের সমস্ত দক্ষতার মানে হচ্ছে এই যে আমরা অন্য সব জীবের তুলনায় আমাদের এই সুবিধাটা আছে যে আমরা প্রকৃতির নিয়মগুলি শিখতে পারি এবং সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ করতে পারি।

মার্ক্সের নামে মার্ক্সবাদীরা যত আবর্জনা তৈরি করেছে সেটার উপর থেকে ধুলাবালি সরানোর জরুরী কাজগুলো করতে হবে। যান্ত্রিক এবং খাবলা দিয়ে মার্ক্স পড়া এইসব মার্ক্সবাদীদের হাত থেকে মার্ক্সকে উদ্ধার করাও একটা বিপ্লবী কর্তব্য।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter