জিয়াউর রহমান একজন জনপ্রিয় সেনা অফিসার, ছিলেন জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়কও

প্রভাষ আমিনের সঙ্গে আমি একমত যে, জিয়াউর রহমানের একটা নির্মোহ বিশ্লেষণ হওয়া দরকার যা এখনো করা হয়ে উঠেনি। এটুকু বলে থামলে কথা ছিল। কিন্তু সেখানে তিনি থামেননি। আরো এগিয়ে তিনিই এই গুরুভার কাঁধে নিয়েছেন। কিন্তু নির্মোহ হতে পারেননি।

তিনি মূল্যায়ন করে সারমর্ম লিখেছেন, ‘জিয়াউর রহমান একজন সুযোগসন্ধানী ও ভাগ্যবান সৈনিক কাম রাজনীতিবিদ’।

প্রভাষ আমিনকে বলি, আধা চোখ দিয়ে পলিটিক্যাল ক্যারেক্টারের মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। জিয়াউর রহমানের মতো বহুবর্ণ রাজনৈতিক ও সামরিক চরিত্রকে তো নয়ই। আর এই নির্মোহ মূল্যায়ন করার জন্য যে পদ্ধতি গ্রহণ করা দরকার সেটাও আপনার আয়ত্তে নেই।

জিয়াউর রহমান একজন কট্টর বৃটিশ ভ্যালুজ নিয়ে পেশাদার সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। পেশাদারিত্বের কঠোর পোশাক ছেড়ে তিনি বেরিয়ে আসেন সেদিন, যেদিন সোয়াত থেকে অস্ত্র খালাস করতে গিয়ে ফিরে এসে নিজ কমান্ডার জানজুয়াকে হত্যা করেন। এটা একটা অসম্ভব কাজ একজন পেশাদার সৈনিকের জন্য। কিন্তু তিনি ভুল করেন নি। পেশাদারিত্বের উর্ধ্বে কখন জাতির মুক্তির আকাঙ্খাকে স্থান দিতে হয়, এই ঘটনা তাঁর উজ্জ্বলতম উদাহরণ। এরপর তিনি ফিরে যান পেশাদার সৈনিকের ভূমিকায় যিনি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অনুগত। এই ভূমিকায় ছিলেন ১৯৭৫-এর ৭ই নভেম্বর পর্যন্ত। ৭ই নভেম্বরের ঘটনা তাঁকে নতুনভাবে নির্মাণ করে। তিনি হয়ে ওঠেন রাজনীতিবিদ। তিনি বন্দী ছিলেন, সৈনিকেরা তাকে মুক্ত করে। তিনি ৭ নভেম্বর ঘটাননি, ঘটানোর সুযোগও ছিল না। বরং ৭ই নভেম্বর তাকে নির্মাণ করেছে। ক্ষমতার জন্য জিয়ার লালসার প্রমাণ অবজেক্টিভলি কেউ দিতে পারবে না।

১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্ট যখন তাকে শেখ মুজিবের মৃত্যু সংবাদ দেয়া হয়, তখন তিনিই বলেছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্টের  ক্ষমতা নেয়া উচিত এবং আমাদের সংবিধানকে উর্ধ্বে তুলে ধরা উচিত। সেদিন যদি জিয়ার কথা শোনা হতো, তাহলে খন্দকার মুশতাক রাষ্ট্রপতি হয় না; জেলহত্যাও হয় না। ৭ই নভেম্বর পর্যন্ত যে অভ্যুত্থান আর পাল্টা অভ্যুত্থানের বেদনা বাংলাদেশকে নিতে হয়েছে, সেটাও ঘটতো না।

তিনি জনপ্রিয় সেনা অফিসার ছিলেন, জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। ভাগ্য তাকে কখনো সহায়তা করেনি। করলে তিনি নির্মমভাবে নিহত হতেন না। ইতিহাস সবচেয়ে যোগ্য মানুষকে তাঁর বরমাল্য পরায়। ৭ই নভেম্বরের পর সেই বরমাল্য অবধারিতভাবেই তার প্রাপ্য ছিল।

কাউকে টেনে নামানোর চেষ্টা না করাই ভালো। ইতিহাস সবার হিসেব পাইপাই করে চুকিয়ে দেয়।

Share

14 thoughts on “জিয়াউর রহমান একজন জনপ্রিয় সেনা অফিসার, ছিলেন জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়কও

  1. প্রভাস আমিন এর মত চাটুকার আর একচোখা সাংবাদিক জিয়ার মত রাষ্ট্রনায়কের মুল্যায়ন করার দুঃসাহস করে! সময় বাদলালে দেখবেন ও বোল পাল্টে সাচ্চা জাতীয়তাবাদী হয়ে গেছে।

  2. ”জিয়াউর রহমান একজন কট্টর বৃটিশ ভ্যালুজ নিয়ে পেশাদার সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। পেশাদারিত্বের কঠোর পোশাক ছিড়ে তিনি বেরিয়ে আসেন সেদিন যেদিন সোয়াত থেকে অস্ত্র খালাস করতে গিয়ে ফিরে এসে নিজ কমান্ড্যার জানজুয়াকে হত্যা করেন। এইটা একটা অসম্ভব কাজ একজন পেশাদার সৈনিকের জন্য। কিন্তু তিনি ভুল করেন নাই। পেশাদারিত্বর উর্ধে কখন জাতির মুক্তির আকাঙ্খ্যাকে স্থান দিতে হয়, এই ঘটনা তাঁর উজ্জলতম উদাহরণ।”
    ______এই কথা গুলো আমি অনেককে বুঝাতে চেয়েছি, পারিনি । সেটা আমার অযোগ্যতা । আপনার মত এমন প্রাঞ্জল ভাষা ব্যবহার না করতে পারাই এর কারন হয়তো । একজন রাজনৈতিক ব্যাক্তির জন্য যেটা সহজ- পেশাদার চাকুরীজীবীর জন্য সেটা সহজ নয় । যারা এখন মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন তারা বা তাদের বাপেরা ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের চাকুরীজীবী ছিল !

  3. জাতীর সন্তানগণ যদি সকল বীর সন্তানকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারতো। দেশ অনেক আগেই সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করতো। কিন্তু আমরা যাকে ভালবাসি তাকে আসমানে উঠিয়েদেই, আর বাকিদের মাটির গর্তে পুতে দেই।-ধন্যবাদ

  4. আমরা শুধু জাতীয় বীরদের যথাযথ মূল্যায়নেই ব্যার্থ হইনি, হীন স্বার্থে আমরা একে অন্যকে কি ভাবে অবমূল্যায়ন করা যায় – সেই প্রতিযোগিতায় ব্যাস্থ আছি। এটা সত্যিই দূর্ভাগ্যজনক।

  5. ৭-৮%প্রবৃদ্ধি,এর সুবিধাভোগী মাত্র ৫% হওয়া এবং প্রবৃদ্ধি অনুযায়ী দেশে বিনিয়োগশূন্যতা—আমরা যদি এই তিনের অন্বয় সাধন করতে পারি তবেই বুঝতে পারবো এই ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী হার্মাদ বাহিনীর চারিত্র্য বৈশিষ্ট্য এবং একজন কথিত মেজরের অসাধারন হয়ে ওঠার রহস্য। এযেন আরব্যরজনীর Thieves of Bagdadএর স্থলে Thieves of Dhakaর পুর্নজন্ম। এই ঢাকাইয়্যা ডাকাতেরা কি না লুন্ঠন করেছে,বাংলাদেশের আনাচে কানাচে এক ইন্ঝি মাটিও এদের সর্বগ্রাসী থাবা থেকে মুক্ত থাকেনি।শেয়ার,ব্যাংক,বিদ্যু,জমি,ভিটা রাস্তা ঘাট,কিছুই বাকী রাখে নাই,হয় বিনা টেন্ডারে ঢুকে পড়েছে,না হয় জোর জবরদস্তি বা জালিয়াতির মাধ্যমে ছিনিয়ে নিয়েছে। ১০হাজার কোটি টাকার পদ্মায় এখন খরচ হবে ৩০হাজার কোটি,বিদ্যু খাতে আওয়ামী হার্মাদদের স্বার্থে তাদের থেকে বেশি দামে কিনে অল্প মূল্যে বিক্রি করা বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ফি বছর ১০-১২হাজার কোটি টাকা,সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে শেয়ার বাজারে লুন্ঠিত অর্থের পরিমান প্রায় ১লক্ষ কোটি টাকার মত ।বাংলাদেশ ব্যাংক স্ক্যাম,destiny আরো হাজারো রকমের অর্থ কেলেংকারী এসবের ই যোগফল হোল গতবছরই বাংলাদেশ থেকে ৬লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়া। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার এরপরেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭%থেকে যাওয়া। বাংলাদেশেী হার্মাদদের অবাধ লুন্ঠন ও কিন্তু প্রমান করে কোন না কোন ভাবে বাংলদেশে অর্থপ্রবাহ হচ্ছে। কিন্তু কেন?

  6. কমান্ড্যার জানজুয়া কে যদি জিয়াউর রাহমান হত্যা করেন তাহলে পাকিস্থানি সেনাবাহিনী তাকে বড় কোন খেতাব দিতো। যেমন নিশান ই হায়দার। কর্নেল জাঞ্জুয়া কি সে ধরনের খেতাব পেয়েছেন যদি পেয়ে থাকেন তাহলে দয়া করে জানাবেন।

  7. জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখে আসছি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। তাই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এবং জিয়াউর রহমান সম্পর্কে ধারণা খুব কম। আপনারা লিখে নতুন প্রজন্মকে উপকৃত করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Feeling social? comment with facebook here!

Subscribe to
Newsletter