ফারুক ওয়াসিফ জানতে চেয়েছেন আমি গত পাঁচ বছরে কয়বার কেবলা পরিবর্তন করেছি। তিনি জানতে চেয়েছেন আবার কবে কেবলা বদলাবো, তার পরে বলেছে আমি নাকি একটা “আবহাওয়া সংবাদ”। এটা ফারুকের তরফে তীব্র আপত্তিকর, তাচ্ছিল্যে ভরা ও একইসাথে মানহানিকর স্ট্যাটাস।
বামপন্থীদের আমি অপছন্দ করি এই কারণেই তারা যে পাতে খায় সে পাতেই হাগে। ফারুক আমার কোন পাতে খেয়েছে সেটা আমি নিজ মুখে না বললেও অনেকেই জানে। ফারুক সেই সম্পর্কের ধার ধারলো না। বহুত খুব, আমার কোন অসুবিধা নাই। সম্পর্কটা নষ্ট কইর্যা দিলে আমার জবান আলগা করা সোজা হইয়া যায়। এদের কারো কাছেই মানবিক সম্পর্কের কোন মুল্য নাই। আমার সাথে তো পাচ-ছয় মাস আগেও ইনবক্সে আলাপ করেছে ফারুক, দেখা করতে আসবে বলেছে, তখন ফারুক মিয়ার মনে হয় নাই সে “আবহাওয়া সংবাদ” এর লগে দেখা করতে যাইতেছে? কোন মতলবে আমার সাথে দেখা করার খায়েশ ছিল তার?
এইবার আসেন তার অভিযোগ নিয়ে। যদিও ফারুক আমার জবাব পাওয়া ডিজার্ভ করেনা। কারণ ফারুকদের মতো মানুষদের আমি আসলেই গুনিনা। তারে যে কেউই গুনেনা, সেটা হয়তো সে জানেনা, কিন্তু ভাব দেখায় সে খুব গুরুত্বপুর্ণ চিন্তক। তারপরেও জবাব দিচ্ছি কারণটা আর কিছুনা, করুণা। তার দিনকাল ভালো যাচ্ছেনা, লেখাটেখা কেউ তেমন পড়েনা। আমি কিছু লেখার সুবাদে যদি এখন তার লেখাটেখা আবার কেউ একটু পড়ে সেটা একটা নগদ লাভ।
কেবলা পরিবর্তন ইসলামের ধর্মতত্ব আর ইতিহাসের একটা গুরুত্বপুর্ণ ঘটনা। সেই ঘটনার ধর্মতাত্তিক আর ঐতিহাসিক মুল্যকে বুঝবার মুরোদ ফারুকদের নাই। তাই আরবের পৌত্তলিকদের মতো কেবলা পরিবর্তন তার কাছে গুনাহর কাজ। কেবলা পরিবর্তন নিয়ে সে যেই মন্তব্য করেছে তা ইসলাম ধর্মের ইতিহাসের প্রতি তাচ্ছিল্য পুর্ণ এবং এটা সীমাহীন ধৃষ্টতা।
ছেচল্লিশ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এই ভুখণ্ডের অনেক বরেণ্য রাজনীতিবিদ তার দল আর চিন্তার পরিবর্তন করেছেন। এবং এই চিন্তার পরিবর্তনই বাংলাদেশের ইতিহাস। শুধু বাংলাদেশেই নয় পৃথিবীর চিন্তার ইতিহাসে রাজনীতির ইতিহাসে এর অসংখ্য নজীর আছে। প্রশ্ন হচ্ছে চিন্তার সেই পরিবর্তনটার গতিমুখ ধরা যাচ্ছে কিনা, সেই পরিবর্তনের কোন ঐতিহাসিকতা আছে কিনা? যারা বদল করতে পারেনা তারা গাড়ল, বুদ্ধিহীন। পৃথিবীর ইতিহাসই চিন্তার বিবর্তনের ইতিহাস। বাংলাদেশের মানুষও পাঁচ বছর পরপর কেবলা বদলের অধিকার চায়। ফারুক কি হাজার অন্যায়, বেঠিককে সহ্য করে ‘কেবলা’ এক জায়গায় রাখার পক্ষপাতী? তাহলে বলতে হয় তার মত ‘উপাসক’ এই পীথিমিতে কমই আছে।
ফারুকের বলা উচিৎ কয়টা কেবলা পরিবর্তন আমার দেখেছে, আর কোনটা তার মতে বেঠিক? কেন বেঠিক? কেবলা পরিবর্তন গুনাহর কাজ হলে কোন মতলবে আমার সাথে এই পাঁচ বছর সম্পর্ক রক্ষা করেছে?
আসল কথা আমরা বুঝি, ফারুকের মাতৃভক্তি দেখাতে হবে, সেই বার্তা আবার আনিসুল হককে দিয়ে জায়গামত পৌছে দিতে হবে, তাই মাঠ গরম রাখার জন্য সে আমারে আগে একটু কোপায়ে নিল। জায়গামত বার্তা পৌছে যাওয়ার পরে অবশ্য তার মাতৃভক্তির গদগদ স্ট্যাটাস সে নিজেই মুছে দিয়েছে।
ফারুকের মতে সিপিবি আওয়ামী লীগের লেজুড়। কিন্তু তার নিজের মাতৃভক্তি যা কাল সকলেই দেখলো, সেটা হচ্ছে বিপ্লবীপনা। বড়ই আশ্চর্য। তার মাতৃভক্তির স্ট্যাটাসটা আমি কপি পেস্ট করেছি, সময় হলে দেখবেন। সেটার সারকথা ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সেই অমর কবিতার মতো।
“তুমি মা কল্পতরু, আমরা সব পোষা গরু, শিখিনি সিং বাঁকানো, আমরা ভুষি পেলে খুশি থাকি, ঘুসি খেলে বাঁচবো না.”
এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের অখাদ্য বামদের মনের প্রার্থনা আওয়ামী লীগের কাছে।
আবার দেখলাম তেনি লম্বা চওড়া বয়ান দিছেন জাতীয় ঐক্য, ভারত ভীতি হ্যান ত্যান ম্যলা কিছু। আরে ভাই প্রথম আলোর কলাম লিখতাছেন, কবিতা লিখতেছেন, ওই কাম করেন, আর মতি মিয়ার ফাই ফরমাস খাটেন। এর বেশী কিছু করতে পারবেন না, ম্যালা চেষ্টা করছেন হয় নাই। আপনার দরকার হচ্ছে সেলফ রিয়ালাইজেশন; তা হচ্ছে, নিজেরে চিন্তক ভাইবেন না, ওইডা হওনের মুরোদ আপনার নাই; আপনারে কেউ পুছেও না, আপনার আওয়াজের কোন ভ্যালু নাই। রাজনীতি করতে আইসেন না, আগে ডাইক্যা দশটা লোক যোগাড় করতে পারেন কিনা দেখেন, তারপরে রাজনীতি নিয়া লম্বা চওড়া বয়ান দিয়েন।
আর সম্পর্ক যেহেতু নষ্ট করছেন, আমার ধারে কাছেও আর আইবেন না।
লেখাটির ফেইসবুক ভার্সন পড়তে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন